৩ বছরে ইউক্রেনে নিহত ১২ হাজার ৮ শতাধিক বেসামরিক : জাতিসংঘ

মত ও পথ ডেস্ক

ছবি : ইন্টারনেট

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে নিহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৮১ জন বেসামরিক। এই নিহতদের মধ্যে ৬৮১ জনই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক।

সেই সঙ্গে  আহত হয়েছেন ৩০ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি বেসামরিক ইউক্রেনীয়। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জয়েস মেসুইয়া বুধবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিজ বক্তব্যে মেসুইয়া বলেন, “জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনে নিহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৮১ জন বেসামরিক, যাদের মধ্যে ৬৮১ জনই শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৩০ হাজার ৫ শতাধিক ইউক্রেনীয়। তবে আমাদের বিশ্বাস, আহত ও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।”

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ইউক্রেনের যে চার প্রদেশ রাশিয়া অধিকার করেছে, সেসব প্রদেশের অন্তত ১৫ লাখ মানুষের বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন; কিন্তু বিধিনিষেধ থাকার কারণে সেসব অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছে না জাতিসংঘের ত্রাণ সামগ্রী।

কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের কিয়েভের তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে মস্কো।

এদিকে ওই একই মাসে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে কিয়েভ; কিন্তু ন্যাটোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া সম্ভব নয়।

যতদিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ততদিন যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, কিন্তু সেগুলোর সবই ব্যর্থ হয়েছে। তার উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়ের পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানকে অগ্রাধিকার দেবেন বলে ঘোষণা দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে। সে বৈঠকে দুই দেশের জ্বালানি স্থাপনা ও কৃষ্ণ সাগরে হামলা করা থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মস্কো-কিয়েভ।

এ ঐকমত্যকে স্বাগত জানিয়ে জয়েস মেসুইয়া বলেন, “আমরা আশা করছি, শিগগিরই ইউক্রেনে যাবতীয় সহিংসতার অবসান ঘটবে এবং শান্তি ফিরে আসবে। কারণ দিন যত গড়াচ্ছে, দেশটির বেসামরিক জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা তত বেশি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। গত এক মার্চের পর থেকে এমন কোনো দিন যায় নি, যেদিন বেসামরিক নিহত বা আহতের ঘটনা ঘটেনি।”

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

শেয়ার করুন