যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের রফতানি বাড়াতে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও ১০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতরের (ইউএসটিআর) কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশ একতরফা ইতোমধ্যে ১৯০টি পণ্যে শুল্কহার শূন্য রেখেছে। এবার আরও ১০০টি পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর একসময় বিদ্যমান অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহারের পর দেশটি বাংলাদেশের সব রফতানি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে মাত্র ৬.১০ শতাংশ শুল্ক নেয়। কাঁচা তুলা ও লোহার স্ক্র্যাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হার যথাক্রমে শূন্য ও এক শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান তুলা সরবরাহকারী দেশ। সেই তুলা দিয়েই দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প পরিচালিত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এই খাতসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়, যা কার্যকর হয় গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল)। ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পৃথক চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাণিজ্য উপদেষ্টা তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ‘টিকফা’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার শুল্ক হার কমানো, অশুল্ক বাধা দূর করা, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা এবং ট্রেডমার্ক ও প্যাটেন্ট সংরক্ষণসহ একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি, মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আহ্বান, খাদ্য ও কৃষিপণ্যে বৃহৎ আমদানির উদ্যোগ এবং স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টাও চলমান রয়েছে।’

চিঠির শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এ ধরনের গঠনমূলক উদ্যোগ ও সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও মজবুত হবে এবং উভয় দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টার পৃথক দুটি চিঠিকে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন