দাবি আদায়ে ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ না হওয়ার পর দাবি আদায়ে রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মিছিল নিয়ে ইনস্টিটিউট থেকে বের হন শিক্ষার্থীরা। এরপর সড়কে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ মিছিল করে ক্যাম্পাস ফেরেন তারা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একইসঙ্গে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনরতদের প্রতিনিধি জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আলোচনা করে রাতে পরবর্তী কর্মসূচি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেও সন্তুষ্ট না হয়ে সারাদেশে মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়সমিনের সঙ্গে বৈঠক হয় শিক্ষার্থীদের।

কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম বলেন, আমরা অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বসেছিলাম, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। এই বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই।

বৈঠকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় উপস্থিত ছিলেন না। সচিব মহোদয়ও ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। অতিরিক্ত সচিব আলোচনা করলেও তার পক্ষে তাৎক্ষণিক বহু সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। কুমিল্লায় আমাদের ভাইদের ওপর হামলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর কোনো কিছু নিয়েই আমরা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত পাইনি। তাই সভা ফলপ্রসু হয়নি, উপদেষ্টা মহোদয় উপস্থিত থাকলে হয়ত ভালো হতো।

এর আগে বুধবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে একযোগে তারা নামায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোগান্তিতে ছিল পুরো নগরী।

দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর বেলা ১১টায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কারওয়ান বাজার রেলগেইটে রেলপথ ব্লকেড করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক চলা পর্যন্ত সে কর্মসূচিতে শিথিল রেখেছিলেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই বুধবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তাকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল–

১. জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

২. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।

৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।

৪. কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব/নিয়োগ দেওয়া।

৫. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।

৬. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন