গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলন আগস্টের শুরুতে এসে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ৫ আগস্ট পতন হয় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আওয়ামী সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলটির সভাপতি ও পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের শীর্ষ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে অর্ধশতাধিক এমপি-মন্ত্রী।
৫ আগস্টের পর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশ্যে সেভাবে কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি দলটির নেতাকর্মীদের। কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েও তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে এ বছরের শুরু থেকে রাজপথ দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। হঠাৎ মিছিল করে আবার ‘নিরাপদ আশ্রয়’ খুঁজে নিচ্ছেন তারা।
তবে সম্প্রতি বেড়েছে আওয়ামী লীগের ‘ঝটিকা মিছিল’।
আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ভিডিওগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, আগের তুলনায় আওয়ামী লীগের মিছিলে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার নিয়ে, মোটরসাইকেল নিয়ে ‘বিক্ষোভ মিছিল’ করছে তারা।
আজ শুক্রবারও রাজধানীর উত্তরায় মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
ওই মিছিলের ব্যানের লেখা ছিল, ঢাকা-১৮ সংসদীয় এলাকা। মিছিল থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটির তিন মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে একই দাবিতে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা আংশিক কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল করেছে। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে।
গতকাল ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মিছিল করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বহদ্দারহাট থানা যুবলীগ।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। ওই দিন সকালে রামপুরা বিটিভি কার্যালয়ের সামনে থেকে এই মিছিল হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ঢাকা-১১ আসনের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মিছিলে বেশ কিছু নেতাকর্মী অংশ নেন।
গত ৬ এপ্রিল গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে। ওই মিছিল থেকে একজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তার বিরুদ্ধে ছয়টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে বিক্ষোভের চেষ্টা করে কয়েকজন। তারা সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এ সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপির নেতারা। তাদের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই দাবি জানিয়ে আসছে। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা কথিত গণহত্যার আসামি। গণহত্যার অভিযোগে দলটিকে আইনি প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
এসব দাবির মধ্যে আওয়ামীগ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝটিকা মিছিল করছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিছিলে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনকে আটকের তথ্য দেওয়া হয়েছে।