৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফাইল ছবি

জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করেও রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফেব্রুয়ারিতে অর্থাৎ অর্থবছরের (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের নবম মাসে রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) মোট রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকায়। যদিও এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এ ৯ মাসে মোট ৩ লাখ ২২ হাজার ১৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। অর্থাৎ আলোচ্য ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলেও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

মোট রাজস্ব আহরণের মতই আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

এনবিআর জানিয়েছে, ৯ মাসে ভ্যাট আদায়ে হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

একই সময়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ০.৩৮ শতাংশ।

এদিকে আয়কর আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা কম। আর প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

অন্যদিকে কেবল মার্চে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আহরণ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৬৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঘাটতি ৭ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থাকলেও এ সময় রাজস্ব আহরণে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। সংস্থাটির হিসাবে একক মাস হিসেবে চলতি অর্থবছরের মার্চে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

আর মার্চে শুল্কে ৮৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ভ্যাটে ৮০ দশমিক ৫২ শতাংশ ও আয়করে ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

মার্চে ৯ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার শুল্ক, ১১ হাজার ৮৮ কোটি টাকার ভ্যাট ও ১৩ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার আয়কর আদায় হয়েছে। মার্চে আয়করে ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ভ্যাটে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ ও শুল্কে ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

ঘাটতির বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, রোজার ঈদের ছুটিতে একটা বড় সময় চলে গেছে। তখন রাজস্ব আদায় বন্ধ ছিল। এছাড়া বিপিসির দেওয়া ৫ হাজার কোটি টাকাও মার্চের হিসাবে আসেনি। কারখানা স্থানান্তর জটিলতার কারণে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো থেকেও দেড় হাজার কোটি টাকা কম আয় হয়েছে। এপ্রিলে এই সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকাসহ মোট আহরণ বাড়বে।

শেয়ার করুন