শূন্যে লাথি মেরে শুরু। এরপর মুখ লুকালেন জার্সিতে। কোমরে হাত দিয়ে ৬ ফিট ৮ ইঞ্চির ব্লেসিং মুজারাবানি ধীর পায়ে হাঁটা শুরু করলেন সৈয়দ তুরাব স্টান্ডের দিকে। হতাশ, না ক্ষুব্ধ এই পেসার যেন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান! উইকেটকিপার নিয়াশো মায়াভোর ক্যাচ মিসে এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখান ব্লেসিং মুজারাবানি। না দেখিয়েও বা কী করবেন! এমন সহজ ক্যাচ কেউ ছাড়ে!
মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা বলটা বাংলাদেশ ওপেনার মাহমুদুল হাসানের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল উইকেটকিপার মায়াভোর হাতে। গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে থাকা মায়াভোর হাতই সবচেয়ে বিশ্বস্ত হওয়ার কথা। সেই মায়াভোই ছাড়লেন সহজ এক ক্যাচ। মায়োভো শুধু মাহমুদুলকে ‘জীবন’ই দিলেন না, বাউন্ডারিও উপহার দিলেন। মুজারাবানির রাগ-ক্ষোভ এই কারণেই।
এই ক্যাচটি নিলেই যে সিলেটে দিনের শেষটাও হতো জিম্বাবুয়ের একক আধিপত্যে। তবে মাহমুদুলের ক্যাচ ছাড়ার পরও সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে জিম্বাবুয়েই এগিয়ে আছে বলা যায়। সিলেটে দ্বিতীয় দিনের খেলা বাংলাদেশ শেষ করেছে ১ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস থেকে এখনো পিছিয়ে ২৫ রানে।
বাংলাদেশ দলের আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম আবার মাহমুদুলের মতো ভাগ্যবান ছিলেন না। ৪ রান করে মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
ওপেনারদের যে ফর্ম, তাতে আসলে ভাগ্যের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। কারণ, টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি সর্বশেষ পঞ্চাশ বা তার বেশি রান তুলেছে ১২ ইনিংস আগে।
জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারের অবশ্য এই উইকেটে কাল শেষ বিকেলে ব্যাটিং করতে সমস্যা হয়নি, ১৪. ১ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে তুলেছিল ৬৭ রান। জিম্বাবুয়ে যে আজ ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারানোর পরও ২৭৩ রান তুলেছে, তার পেছনে আগের দিন ওপেনিং জুটির তোলা ওই ৬৭ রানের বড় অবদান।
বাংলাদেশের বোলাররা অবশ্য আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন আলোচিত নাহিদ রানাই। দিনের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে ফেরান এই পেসার। আউট করেছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকেও।
হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদও ছিলেন দুর্দান্ত। স্পিনার তাইজুল ইসলাম নিষ্প্রভ ছিলেন। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট। এসবের কল্যাণেই ৬৯ রানে প্রথম উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে ২৭৩ রানে গুটিয়ে দেওয়া গেছে।
বাংলাদেশের ভালো বোলিংয়ের মধ্যেই কার্যকরী রান তুলে নিয়েছে আরভিনের দল। ব্রায়ান বেনেটের ফিফটির পর শন উইলিয়ামস ফিফটি পেয়েছেন। তিনি ৫৯ রানে মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়ার পরও জিম্বাবুয়ে আরও ৮০ রান যোগ করেছে।
এতে কৃতিত্ব পাবেন জিম্বাবুয়ের লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরাও। নিয়াশো মায়াভোর ৩৫ রানের পর মুজারাবানির ১৬ ও রিচার্ড এনগারাভার ২৮ রান বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়েছে।
উইলিয়ামস থাকলে নিশ্চিতভাবে আরও বড় হতে পারত জিম্বাবুয়ের স্কোর। ৫৯ রানে ব্যাটিং করা উইলিয়ামসই বড় লিডের জন্য জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা ছিলেন। মনযোগ না হারিয়ে ইনিংসটা টানতে পারলে বড় লিডের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহটাও হয়তো বড় হতো। ২০১৮ সালে এই সিলেটেই বাংলাদেশকে হারানোর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন উইলিয়ামস। তাই উইকেট ‘উপহার’ দেওয়ার জন্য উইলিয়ামসকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে বাংলাদেশ।
সিলেটে এমন এক দিনেও প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের—মিরাজ ৫ উইকেট নিলেন, মুমিনুল বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১টি ক্যাচ ধরার রেকর্ড গড়লেন। ব্যক্তিগত এসব পারফরম্যান্সই এখনো আলোচনার বিষয়। সেটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৯১ ও ১৩ ওভারে ৫৭/১ (মাহমুদুল ২৮*, মুমিনুল ১৫*, সাদমান ৪; মুজারাবানি ১/২১, নিয়াউচি ০/১১, এনগারাভা ০/২০)।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৮০.২ ওভারে ২৭৩ (উইলিয়ামস ৫৯, বেনেট ৫৭, মায়াভো ৩৫, এনগারাভা ২৮*; মিরাজ ৫/৫২, নাহিদ ৩/৭৪, খালেদ ১/৩০, হাসান ১/৫৫)।