লালমনিরহাটের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালুর দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এখানকার মানুষ। গত চার দিন ধরে টানা রেলপথ অবরোধের পর আন্দোলনকারীরা আপাতত অবরোধ স্থগিত করেছেন। তবে, রেলওয়ে বিভাগ লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে চলাচলকারী চার জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই অঞ্চলের যাত্রীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে আগামী রোববার থেকে রেলপথ ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় পাটগ্রাম সংগ্রাম উন্নয়ন পরিষদ পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এক আলোচনা সভায় মিলিত হন। সেখানে বক্তারা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুড়িমারী থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালুর জোর দাবি জানান।
পাটগ্রাম সংগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক এটিজে সিদ্দিকী কাকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহ প্রধান, আমিনুল হক, শিক্ষক প্রতিনিধি ওয়ালিউর রহমান সোহেল, কলেজ শিক্ষক শওকত হায়াত প্রধান বাবু, সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর কবির শামীম, পাটগ্রাম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি আলীনূর লাইজু, পাটগ্রাম কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবী পরিষদের সভাপতি আব্দুল আকবার বিন আফসার ও পৌর মহিলা দলের আহ্বায়ক সিদরাতুল মুনতাহা মিতু প্রমুখ।
এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগের রাজশাহী ও লালমনিরহাটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার নুর আলম জানান, অবরোধের কারণে গত চার দিন ধরে চারটি ট্রেনের চলাচল বন্ধ রয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেনের সরাসরি চলাচল নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেনটি চালুর দাবিতে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও এলাকাবাসী সাত থেকে আটবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সে সময় লালমনিরহাট রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগ ও রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় সদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অন্তত পাঁচবার দিন-তারিখ উল্লেখ করে ট্রেনটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও অবরোধের পথে নামেন স্থানীয়রা।
গত ২১ এপ্রিল থেকে অবরোধের ফলে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটে চলাচলকারী চারটি ট্রেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ। বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো হলো— বুড়িমারী থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়া পার্বতীপুরগামী লোকাল ট্রেন, বেলা ১১টায় পার্বতীপুর থেকে বুড়িমারী আসা ‘বুড়িমারী কমিউটার’, বিকেল ৪টায় বগুড়ার সান্তাহার থেকে আসা আন্তঃনগর ‘করতোয়া এক্সপ্রেস’ এবং সন্ধ্যা ৬টায় বিরল থেকে ‘বিরল কমিউটার’ কানেক্টিং বুড়িমারী এক্সপ্রেসের শাটল ট্রেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ মার্চ আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধনের দিনে সরাসরি বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে মাত্র একদিনের জন্য যাত্রা করেছিল। ট্রেনটি চালুর জন্য গত এক যুগে অন্তত ১০ বার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বর্তমানে ট্রেনটি লালমনিরহাট থেকে ঢাকা রুটে চলাচল করছে। ফলে বুড়িমারী থেকে এই ট্রেনের যাত্রীদের একটি শাটল ট্রেনের মাধ্যমে লালমনিরহাট যেতে হয়, যা জেলার চার উপজেলার যাত্রীদের সময় নষ্ট ও হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।