মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এ সময় বসতঘরে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এতে ওই এলাকায় উত্তেজনা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিবদমান এ দুটি পক্ষের একটির নেতৃত্বে আছেন ইমামপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সাজেদুল ইসলাম ওরফে লালু ও মো. সৈকত হাসান।
পুলিশ বলছে, আধিপত্য বিস্তার ও নদী থেকে বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব নিয়ে এ পক্ষ দুটি এর আগেও একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পক্ষ দুটির নেতৃত্ব থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, মেঘনা নদীর বালুমহলের নেতৃত্ব এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আমিরুল ইসলাম পক্ষের সঙ্গে সাজেদুল ও সৈকত পক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাজেদুল ও সৈকত পক্ষের অন্তত ৩০-৪০ জনকে গ্রামছাড়া করেন আমিরুল পক্ষের লোকজন। সাজেদুল পক্ষের লোকজন বাড়িতে উঠতে গেলেই বাধা দেন আমিরুল ও তাঁর লোকজন। এ নিয়ে এ দুটি পক্ষ গত চার মাসে ছয়বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
সবশেষ ৬ এপ্রিল আমিরুল পক্ষের হামলায় সাজেদুল ও সৈকত পক্ষের আল আমিন ও রেনু মিয়া নামের দুজন আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় সম্প্রতি জামিন পান আমিরুল পক্ষের লোকজন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় সাজেদুল, সৈকত এবং তাঁদের পক্ষের জয়, মান্নান, আলী আকবর, হাসান, সজীব, মাসুদসহ ঘরছাড়া লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে উঠতে যান। এ সময় খবর পেয়ে আমিরুলের লোকজন সংঘবদ্ধ হন। একপর্যায়ে পক্ষ দুটি পাল্টাপাল্টি গুলি, ককটেল ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় সংঘর্ষে আমিরুল পক্ষের হৃদয় নামের একজন মারা গেছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। সাজেদুল পক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান আমিরুলের লোকজন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাল্টা হামলা চালায় সাজেদুল ও সৈকত পক্ষ। এ সময় একটি বসতঘরে ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন তাঁরা। উভয় পক্ষের মধ্যে দুই দফা পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘রাতে থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও দৌড়ঝাঁপের শব্দ শুনেছি। এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে যাঁর যাঁর ঘরে ছিলেন। শব্দগুলো গুলির, ককটেল অথবা অন্য কোনো বিস্ফোরণের হতে পারে।’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরপর দুটি পক্ষ গোলাগুলিতে জড়াচ্ছে। তাদের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। সম্পূর্ণ গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত। যেকোনো সময় তাদের দ্বন্দ্বে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা চাই, এ দুই পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
এ ব্যাপারে একপক্ষের নেতা মো. সৈকত হাসান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বাড়িতে আসব—এমন খবরে আমিরুল ও তাঁর ছেলে সুমনের নেতৃত্বে তাঁদের লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর চালান। আমাদের সমর্থক সোহেল, নূর মোহাম্মদ, আহমদ আলী, বাচ্চু ও আলী আহমদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। আমাদের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আমিরুল পক্ষ। তাঁর ছেলে সুমন ব্যাপারী বলেন, ‘সাজেদুল, সৈকত, শুটার মান্নান, আলী আকবর, হাসান, সজীব, মাসুদসহ ১০-১৫ জনের একটি দল আমাদের বাড়িতে চাঁদা চাইতে আসে। বাবা তাদের ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দেয়। এরপরও আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিবর্ষণ করে বসতঘরে ভাঙচুর করে।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল আলম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি। তবে এলাকার মানুষের শান্তির জন্য পক্ষ দুটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।