টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় ‘অভয়ারণ্য’ নামের একটি পাঠাগার থেকে পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তৌহিদি জনতার পরিচয়ে ১৫-২০ জনের একদল যুবক পাঠাগারে ঢুকে বই নিয়ে যায়। পরে পাঁচটি বস্তায় ভরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেয় তারা। ওই যুবকদের দাবি, তারা যেসব বই পাঠাগার থেকে নিয়ে এসেছেন, সেগুলো ধর্মবিরোধী। এসব বই পড়ে যুবসমাজ ধর্মবিরোধী হয়ে উঠছে।
পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় দুই লাখ টাকার বই ও নথিপত্র লুট এবং ৫০ হাজার টাকার আসবাব ভাঙচুর করেছে ওই যুবকরা। তারা যে বইগুলো নিয়ে গেছে তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই রয়েছে।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, তৌহিদি জনতার নাম নিয়ে স্থানীয় গোলাম রাব্বানী রিশাদ, সোহেল, শাফি, শহিদুল ইসলাম আলামিনসহ ১৫-২০ জনের একটি দল পাঠাগারে ঢুকে বই বস্তায় তুলতে শুরু করে। তারা হুমকি দিয়ে বলে, এখানে কোনো পাঠাগার থাকতে দেবে না, বই পুড়িয়ে ফেলবে।
এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অভয়ারণ্য পাঠাগার যারা পরিচালনা করেন, তারা সব ধর্মের বিরোধী। গত বুধবার এই পাঠাগারের এক সদস্য ফেসবুকে ধর্মবিরোধী একটি পোস্ট দেয়। আমরা তাকে ডেকে কথা বলি। তার কাছে জানতে পারি, সে ওই পাঠাগারের সঙ্গে জড়িত হয়ে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে। এ জন্য বৃহস্পতিবার আমরা পাঠাগারে গিয়ে যে বইগুলো ধর্মবিরোধী মনে হয়েছে, তা নিয়ে ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছি। বই লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।’
ইউএনও শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘তৌহিদি জনতার নাম করে কয়েকজন কারও অনুমতি ছাড়াই বস্তায় ভরে বইগুলো পাঠাগার থেকে আমার অফিসে নিয়ে এসেছেন। রোববার দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, ‘হামলা কেবল বইয়ের ওপর নয়, মুক্তচিন্তা ও যুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চার একটি নিরাপদ পরিসরকে ধ্বংসের চেষ্টা। আমি দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং পাঠাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’
ধনবাড়ী থানার ওসি এস এম শহিদুল্লাহ জানান, এ ঘটনায় পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ ৪-৫ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।