ডিএসই : পাঁচ সপ্তাহের টানা পতনে বাজার মূলধন হারালো ২১ হাজার কোটি টাকা

মত ও পথ ডেস্ক

ডিএসই’র বাজার মূলধন কমলো / দর পতন
ফাইল ছবি

টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। এতে সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হওয়ার পাশাপাশি বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমেছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো দেশের শেয়ারবাজার।

পাঁচ সপ্তাহের এই টানা পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হওয়ায় মতিঝিলে কাফন মিছিল করেছেন বিনিয়োগকারীদের এক অংশ।

দুই সপ্তাহের টানা পতনের পর গত সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। তবে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত জড়ানোর আতঙ্কে গত বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। একদিনেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে যায় ১৪৯ পয়েন্ট। এছাড়া বাজার মূলধন কমে ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে বৃহস্পতিবার আবার বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

এতে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের মাত্র কিছুটা কমে। অবশ্য এরপরও দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থেকেই সপ্তাহ শেষ হয়। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪১টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩০টির। এছাড়া ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

শেয়ারবাজারে এমন পতন হওয়ায় বৃহস্পতিবার মতিঝিলের রাস্তায় কাফনের কাপড় পড়ে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীদের এক অংশ। এই কাফন মিছিল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদের অপসারণের দাবি জানানো হয়।

বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। পাঁচ সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। অপর দুই সূচকের মধ্যে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৯ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮২ শতাংশ। এছাড়া বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ২ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ১৩ শতাংশ।

গত সপ্তাহের দাম কমার তালিকায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ডিএসইতে লেনদেনের গতি বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৬ কোটি ২ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এনআরবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, লাভেলো আইসক্রিম, কেডিএস এক্সেসরিজ, উত্তরা ব্যাংক এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।

শেয়ার করুন