নাফ নদে দুই দফা আরাকান আর্মির গুলি, আহত ২ অপহৃত তিন বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাফ নদী। সংগৃহীত ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদে আরাকান আর্মির বেপরোয়া তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। কদিন পর পর নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানা থেকে নৌকাসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার নাফ নদে এক দিনে পৃথক দুই ঘটনায় গুলি করে দুজনকে আহত ও তিনজন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ামারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।

দুই ঘটনাতেই গুলি ছোড়ে আরাকান আর্মি। নাফ নদে আরাকান আর্মির গুলির ঘটনায় স্থানীয় পেশাজীবী জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ১১ মাসের লড়াইয়ের পর গত ৮ ডিসেম্ব রাখাইন দখল করে আরাকান আর্মি। এরপর তারা নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের তৎপরতা বাড়ায়। নাফ নদে মাছ ধরাসহ নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পথে একাধিকবার বাংলাদেশি জলযানের ওপর তারা গুলি চালালে ওই নৌপথ বন্ধ রাখে বাংলাদেশ।

বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২০৪ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রচেষ্টায় ফেরত আনা হয় ১৮৯ জনকে।

সর্বশেষ আজ সোমবার (১২ মে) দুপুরে টেকনাফের সাবরাং সীমান্তে নাফ নদে মাছ ধরার সময় দুই জেলে আহত হন আরাকান আর্মির গুলিতে। গুলিবিদ্ধ জেলেরা হলেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার হেদায়েত উল্লাহ (১৭) ও মো. হোসেন (১৬)। তারা কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে দুপুরেই টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা-সংলগ্ন নাফ নদে আরাকান আর্মি প্রথমে গুলি এবং পরে ধাওয়া করে নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায় তিন বাংলাদেশিকে। তারা হলেন পূর্ব লেদার লামারপাড়ার সিদ্দিক হোসেন (২৭), রবিউল আলম (২৭) ও মাহমুদ হোসেন (৩০)।

এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গুলির ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ দুপুরে হেদায়েত উল্লাহ ও মো. হোসেন নাফ নদে বাংলাদেশ অংশে মাছ ধরছিল। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে হেদায়েত উল্লাহ ও হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় অন্য জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আহত হেদায়েত উল্লাহ বড় ভাই আবদুর রহিম জানান, মাছ ধরতে গিয়ে আরাকান আর্মির গুলিতে তার ভাইসহ দুজন আহত হয়েছে। তাদের কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে আরাকান আর্মির হাতে তিনজনের অপহরণের ঘটনার সম্পর্কে হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, আজ দুপুরের দিকে ওই তিনজনকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যায়। তবে তিনি তাদের পেশাগত পরিচয় জানেন না।

স্থানীয়রা জানান, ওই তিনজন নৌকা নিয়ে নাফ নদে নেমেছিলেন। আরাকান আর্মি তাদের দিকে গুলি চালায়। পরে তাদের ধাওয়া করে আটক করে নিয়ে যায়।

স্থানীয় জেলেরা জানান, নাফ নদে আজ আরাকান আর্মির গুলির ঘটনায় তারা আতঙ্কিত। তাদের মধ্যে এখন মাছ ধরা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শেয়ার করুন