চবির সমাবর্তনে ২৪০০ পুলিশ সদস্যের কেউ পাননি এক প্যাকেট খাবার!

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে সপ্তাহব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের আড়াই সহস্রাধিক সদস্য। সারাদেশ থেকে আনা হয়েছিল অত্যাধুনিক ৪০টি আর্চওয়ে। কিন্তু সমাবর্তনের দিন কর্তব্যরত দুই হাজার ৪০০ পুলিশ সদস্যকে চরম হতাশ হতে হয়েছে। দীর্ঘ কর্মঘণ্টায় তাদের ভাগ্যে জোটেনি এক প্যাকেট শুকনো খাবারও। এমনকি একটি বোতল পানি কিংবা সামান্য স্যালাইনের ব্যবস্থাও করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নিরাপত্তায় নিয়োজিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল, স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়েই নিরাপত্তার কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় শেষ মুহূর্তে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হয়। প্রধান অতিথির আগমন উপলক্ষ্যে পুলিশ সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন। সমাবর্তনে আগত শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন তারা। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হতাশার সুরে এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যাদের ঘামে ভেজা পরিশ্রমে এত বড় একটি সমাবর্তন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো, তাদের সামান্য খোঁজও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তনের দীর্ঘ দিনে একজন কর্মীকেও একবেলা খাবার দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তনে প্যান্ডেলে পানি ও পাখার সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমি অবগত। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

পুলিশ সদস্যদের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এটি প্রথম শুনলাম। আমরা ওপেনিং ডে-তে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করব।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন ছিল প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। দীর্ঘ অ্যাকাডেমিক পথচলার পর গাউন ও টুপি পরে ডিগ্রি নেওয়া, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে শেষবারের মতো একসঙ্গে হওয়া, বাবা-মায়ের চোখে সন্তানের সাফল্যের উজ্জ্বলতা-সব মিলিয়ে এটি ছিল অনেকের জীবনের এক স্মরণীয় দিন। তবে এই আনন্দের আবহেই মিশে ছিল অসন্তুষ্টি ও দুর্ভোগের দীর্ঘ ছায়া। বিশাল বাজেটের আয়োজনেও দেখা গেছে শৃঙ্খলার অভাব। পর্যাপ্ত ফ্যান, পানি, বসার স্থান ও কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থার ঘাটতিতে শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হয়েছেন। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন বাস বা ট্রেনের জন্য। প্যান্ডেলের তাপ, সাউন্ড সিস্টেমের ত্রুটি এবং ভিআইপিদের অগ্রাধিকার নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

একদিকে গর্বিত মুখ, অন্যদিকে ক্লান্ত দেহ-চবি সমাবর্তনের অভিজ্ঞতা তাই অনেকের কাছে রয়ে গেছে মিশ্র অনুভবের রূপে। শিক্ষার্থীরা জানান, সমাবর্তন শেষে তারা সবচেয়ে বেশি পরিবহনের সংকটে পড়েছেন। অবস্থা এমনও হয়েছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে শহরে পৌঁছেছেন ট্রাকে। বাস আর অটোরিকশাতেও ঠাঁই হয়নি অনেকের। কেউ কেউ ফিরেছেন অ্যাম্বুলেন্সে করে। এদিন সন্ধ্যার পর এমনও হয়েছে, টাকা দিয়েও গাড়ি মেলেনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ লোকজনের যাতায়াত নিয়ে একেবারে কোনো পরিকল্পনা নেয়নি চবি প্রশাসন।

সমাবর্তনে আসা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক তাসনীম বলেন, কনভোকেশন থেকে ফেরার পথে পরিবহন সংকটের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। সমাবর্তনের প্যান্ডেলে পর্যাপ্ত পানি ও পাখার ব্যবস্থা ছিল না। ফলে তীব্র গরম ও খাবার পানির অভাবে অনেকে শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মমতা খানম বলেন, প্যান্ডেলে সবার বসার ব্যবস্থা সুন্দরভাবে করতে পারেননি। যারা না গেলেই নয় তাদের জন্য তো ভালো ব্যবস্থা করতেন। আমাদের জন্য ফ্যাকাল্টিতে স্ক্রিনের ব্যবস্থা করে দিলেও হতো। পর্যাপ্ত ফ্যান নেই পানি নেই, সাউন্ডও শোনা যায় না। তাহলে এত পথ পায়ে হেঁটে এনে ওখানে বসে রাখার মানে কি হলো?

শুধুই কি হতাশা? না। নানান অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের অর্জিত স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আনন্দিত। তারা এই দিনটিকে জীবনের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দের অংশীদার হয়েছেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ৫৮৬ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ৪২ জন পিএইচডি, ৩৩ জন এমফিল এবং ২২ হাজার ৫২২ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়। এই বিশাল আয়োজনের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বিশাল আকারের প্যান্ডেল।

শেয়ার করুন