ইতিহাসের ভয়াবহতম ট্র্যাজেডি চুকনগর গণহত্যা, নেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের এই দিনে খুলনার চুকনগরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে মাত্র চার ঘণ্টায় প্রাণ হারান ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত সবচেয়ে বড় একক গণহত্যা। অথচ আজও ঘটনাটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তো পায়নি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও রয়ে গেছে উপেক্ষিত।

চুকনগর ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ভারতগামী একটি অন্যতম নিরাপদ পথ। দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রামপাল, তেরখাদা ও ফকিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শরণার্থীরা দলে দলে এসে জড়ো হন এই বাজারকেন্দ্রিক এলাকায়। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রা নদী, আর তার পাশে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শত শত মানুষ অবস্থান করছিল সেদিন।

২০ মে সকালে আচমকা চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক ধরে মালতিয়া মোড়ের কাছে পাকবাহিনীর একটি ট্রাক ও একটি জিপ এসে থামে। আশপাশের মানুষ কিছু বোঝার আগেই শুরু হয় নির্বিচার ব্রাশফায়ার। গুলি করে প্রথমে হত্যা করা হয় এক বৃদ্ধ পাটচাষি চিকন আলী মোড়লকে। এরপর নিহত হন স্থানীয় সুরেন্দ্রনাথ কুণ্ডু। তারপর শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, চার ঘণ্টা ধরে হানাদার বাহিনী বাজার ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে ঘুরে গুলি চালায়। নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কেউ রেহাই পাননি। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাজার হাজার মানুষ। লাশ ফেলা হয় পাশের ভদ্রা নদীতে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেই নদী একসময় রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল।

চুকনগরের মতো ভয়াবহ গণহত্যা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান ইতিহাসবিদরাও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এটিকে অন্যতম নৃশংস গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অবাক করার মতো বিষয়, এত বড় একটি ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চায় এখনও উপেক্ষিত। নেই পাঠ্যপুস্তকে, নেই জাতীয় স্বীকৃতি। শুধু স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে একটি বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ।

চুকনগর গণহত্যা একাত্তর স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ এবি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চুকনগর গণহত্যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একক গণহত্যা। একই স্থানে এত মানুষ হত্যার ঘটনা আমার জানা নেই। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরি। ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের প্রয়োজনে এটি চাই আমরা।’

স্থানীয়দের দাবি, ২০ মে-কে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।

শেয়ার করুন