আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারে চাপ ও পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া ৩ জনকে রাতে হেফাজতে নেওয়ার পর আজ (মঙ্গলবার) তাদের ছেড়ে দিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা ও পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি থানার ওসিকে উদ্দেশ্য করে এক তরুণ বলেন— ‘আপনি কেন এইখানে কথা বলতেছেন এইভাবে। আপনি ওসি আপনি গ্রেপ্তার করলেন না কেন। আমি বলছি, আমি বলছি… আপনি গ্রেপ্তার করেন।’
এরপরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনজনকে হেফাজতে নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন এবং এনসিপি নেতা হান্নান মাসুদের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ওই ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সোমবার (১৯ মে) রাত ১১টার পর একদল লোক ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ৩৬/১ বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে ‘আওয়ামী দোসরদের ঠাঁই নাই’ বলে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর দারোয়ানকে ধাক্কা দিয়ে বাসার চতুর্থ তলায় ঢোকার চেষ্টা করেন তারা। ৯৯৯-এ কল করে পরিস্থিতি জানিয়ে অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।
রাতেই মুঠোফোনে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই। আমার জানামতে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে আমি একজন পাবলিশার্স হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বা মতাদর্শের বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরও অনেক বই আমি প্রকাশ করেছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি, জাতীয়পার্টি এবং জামায়াতের বইও আমি প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার ব্যবসা। এজন্য আমাকে আওয়ামী দোসর বানিয়ে মধ্যরাতে বাসায় এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা, দারোয়ানকে মারধর কিংবা মব সৃষ্টির চেষ্টা কেউ করতে পারে না।’
ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু বলেন, একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে মবের চেষ্টা করা হয়। কিছু লোক জোর করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টাও করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। আমি নিজেও সেখানে ছিলাম। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা খারাপ আচরণ করেন।
ওসি বলেন, তরুণদের গ্রেপ্তারের চাপাচাপিতে আমি বলি, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা আছে, মামলা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। আমি তাদের বিশৃঙ্খলা না করে চলে যেতে বললে তারা খারাপ আচরণ করেন। উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলা শুরু করেন।
পুলিশের ধানমন্ডি জোনের এসি শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা পরিচয়ধারীরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে প্রকাশককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না জানালে তারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে। আবাসিক এলাকায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন বিবেচনায় তিনজনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদসহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে পরিবারের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। অন্য দুইজন হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান সরকার দীনা (২৬) ও মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪)।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, হাক্কানী পাবলিশার্স থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর সিক্রেট ডকুমেন্টস’ (সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) শীর্ষক ১৪ খণ্ডের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এই সংকলনে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা গোপন নথিপত্র সংকলিত রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকলনের সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বইটির প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচনও তিনিই করেন।
এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রও ১৫ খণ্ডে প্রকাশ করেছে হাক্কানী পাবলিশার্স।