সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি: মঙ্গলবার থেকে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সচিবালয়ে আন্দোলন

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–কে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। এই অধ্যাদেশকে অবৈধ কালো আইন আখ্যা দিয়ে সোমবারের মধ্যে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। অন্যথায় মঙ্গলবার থেকে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান বদিউল কবির ও নুরুল ইসলাম। পরে আজকের মতো কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ শুরু হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ বাতিল না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এর আগে সোমবার সকাল ১১টায় যার যার দপ্তর ছেড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। প্রতিটি ভবন থেকে নেমে এসে তারা মিলিত হন সচিবালয়ের কেন্দ্রস্থল বাণিজ্য ভবনের সামনের গাছ তলায়। সেখানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মচারীরা।

এরপর মিছিল সহকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়সহ সচিবালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন তারা। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ সচিবালয়ের কর্মকর্তা বা দর্শনার্থীদের প্রবেশ এবং চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনার আশ্বাস দেওয়ার পরও কর্মচারীদের মতামত ছাড়াই রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে এই অধ্যাদেশ গেজেট আকারে জারি করা হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে কর্মচারীদের শাস্তির বিধান যুক্ত করা হলেও এক্ষেত্রে কর্মচারীদের কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে তারা নানা বৈষম্যের শিকার হবেন বলে অভিযোগ করেন। এসময় সংশোধিত অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সকল সচিব এবং সংশ্লিষ্টদের অপসারণের দাবি করেন।

অধ্যাদেশটি বাতিল করা না হলে সচিবালয় থেকে এবার সারা দেশের কর্মচারীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে জানিয়ে নেতৃবৃন্দ জানান, সোমবার বিকেলের মধ্যে এই অধ্যাদেশ বাতিল করা না হলে মঙ্গলবার থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর গতকাল রবিবার তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো— সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ বা চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত দণ্ড প্রদান করা যাবে।

এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন।

 

শেয়ার করুন