ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি পদে আর দেখতে চায় না সরকার—গত রাতে তাঁকে এমন আভাস দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। কিন্তু ফারুক তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
ফারুকের এই সিদ্ধান্তের পর বিসিবির ৮ পরিচালক তাঁর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। পরিচালকদের সেই অনাস্থা প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করল।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ১১টায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনএসসি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফারুককে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে ৮ পরিচালকের তাঁর প্রতি অনাস্থা ও বিপিএল নিয়ে সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা স্বাভাবিক রাখার কথা উল্লেখ করেছে এনএসসি।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরিচালকদের মধ্য থেকে একজন বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। যেহেতু তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, তাই বিসিবি সভাপতি পদে এখন তাঁর আর থাকার কথা নয়।
মনোনয়ন বাতিলের পর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চিঠিটি আমি দেখেছি। এ ব্যাপারে আমি এখন কোনো মন্তব্য করব না। আগামীকাল আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।
নিজেকে এখনো বোর্ড সভাপতি মনে করেন কিনা—এই প্রশ্নে ফারুক বলেন, এটা আমি নিজেও জানি না। সবকিছু তো আসলে নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। তবে আমি এখনো পদত্যাগ করিনি।
দৃশ্যত ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক। সাক্ষাতে উপদেষ্টা নাকি ফারুককে বলেছেন, বোর্ড সভাপতি হিসেবে তাঁকে আর রাখতে চাচ্ছে না সরকার।
কাল রাতেই এ ব্যাপারে ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে সাক্ষাতে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফারুকের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হয়। পদত্যাগ করবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি সোজাসাপটা জবাব দেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পদত্যাগ করব না। আমাকে পদত্যাগ করতে বলাও হয়নি। আমাকে বলা হয়েছে, সরকার নাকি আমাকে আর বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাখতে চাইছে না। কিন্তু কেন রাখতে চাইছে না, সেটার কোনো কারণ তারা আমাকে বলেনি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না।’
ফারুকের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তকে বিসিবির কার্যক্রমে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বলে মনে করছেন দেশের ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট অনেকেও তাঁকে পদত্যাগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিসিবিতে এনএসসি মনোনীত পরিচালক হিসেবে এলেও ফারুক বোর্ডের নির্বাচিত সভাপতি। তিনি যদি স্বেচ্ছায় বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরে না যান, কিংবা বিসিবির গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত কোনো কারণে সভাপতি পদের জন্য অযোগ্য বিবেচিত না হন, তাহলে সরকার চাইলেও তাঁকে সরাতে পারবে না।
জোরপূর্বক সরানো হলে সংকটে পড়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটই। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে না। অতীতে এ ধরনের হস্তক্ষেপের কারণে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হয়েছে।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের জায়গায় ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিসিবির পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। পরে বোর্ড সভায় পরিচালকদের ভোটে ফারুক আহমেদ সভাপতি নির্বাচিত হন।
সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের কথা ভাবছে সরকার। এনএসসি এরই মধ্যে তাদের মনোনীত পুরোনো একজন কাউন্সিলরের জায়গায় আমিনুলকে কাউন্সিলর করার চিঠি ইস্যু করেছে।