ঢাকার খুচরা বাজারে মাংসের তালিকায় এখন একমাত্র স্বস্তির নাম ব্রয়লার মুরগি। যেখানে গরুর মাংসের দাম ৭৫০–৮০০ টাকা আর খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে ব্রয়লার পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৬০–১৭০ টাকায়। এদিকে কিছু মাছের দামও অনেকটা ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে মুরগির মাংসকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে নিচ্ছেন। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগ মুহূর্তে মুরগির দামও কিছুটা বাড়তে পারে।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে দাম কমেছে ১০ টাকা। সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা কমে এসেছে, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকায়। তবে দেশি মুরগির দাম এখনও রয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে, বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংসের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। ডিমের দামও কমছে না—প্রতি ডজন ডিম এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৩৫–১৪০ টাকায়।
মাছের বাজারেও ভোক্তারা খুব একটা স্বস্তিতে নেই। আজকের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৫০ টাকায়, কাতল ৩৫০–৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০–৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৮০০ টাকা, টেংরা ৬০০–৭০০ টাকা, শিং ৪০০–৪৫০ টাকা, কৈ ২৫০–২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০–২২০ টাকা ও পাঙাশ ১৮০–২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া দেশি শিং ও কৈ বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকায়।
রামপুরা বাজারে দেখা যায়, ক্রেতা বাবুল আক্তার গরুর মাংস না নিয়ে ২ কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা গরুর মাংস চায়, কিন্তু এটা এখন আর সামর্থ্যের মধ্যে নেই। মুরগির দামই একমাত্র সহনীয়।
আরেক ক্রেতা নুরুল কাদের বলেন, রুই-কাতলসহ ছোট মাছগুলোর দিকে তাকানোরও উপায় নাই। এক কেজি চিংড়ির দামে তিনদিন চলার মতো বাজার হয়। মাছ কিনতে আসলে পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া ছাড়া আর কিছুই কেনার অবস্থা থাকে না।
তালেব আহমেদ নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, মেসের প্রধান খাবারই হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি আর পাঙাশ। একটা সময় সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো, এখন মুরগিই ভরসা।
কারওয়ান বাজারে মুরগির বিক্রেতা জহিরুল চৌধুরী জানান, ব্রয়লারের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। অনেকে বেশি করে কিনে ফ্রিজে রেখে দিচ্ছেন। তবে ঈদের আগে দাম একটু বাড়বে নিশ্চিত।
মাংস বিক্রেতা হযরত আলী বলেন, আমরা কম দামে কিনলে কমেই বিক্রি করতাম। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে বলেই আমরা পারি না। এখন সব নির্ভর করে হাটে কীভাবে দাম ওঠানামা করছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে শুধু মুরগি নয়, সব ধরনের মাংস ও মাছের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। বাজারে সরকারিভাবে নজরদারি না বাড়ালে এর প্রভাব পড়বে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাদ্য নিরাপত্তার ওপর।