শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজার
ফাইল ছবি

দিন যত যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা তত প্রকট হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর রোববার (১ জুন) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ২৫ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।

তবে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠলেও টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে এসেছে শেয়ারবাজার। ডিএসই’র পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর টানা দুই কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়লো।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইতে ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে আবার নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক মাস ধরে চলা দরপতনের সঙ্গে এখন শেয়ারবাজারে লেনদেন খরাও প্রকট হয়ে উঠছে।

বর্তমান সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২২ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্ট হয়। তিনদিনের মাথায় সেই রেকর্ড ভেঙে ২৫ মে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এখন সেই রেকর্ড ভেঙে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। রোববার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনবার ডিএসইতে ২৫০ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো। এর আগে গত ২৫ মে ডিএসইতে ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার লেনদেন হয়। তারপর গত ২৯ মে ডিএসইতে ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে টানা ১৪ কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেনের ঘটনা ঘটলো।

এমন লেনদেন খরা দেখা দিলেও রোববার ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১২টির। আর ৮৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৫৫টির দাম কমেছে এবং ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৪১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ২৯টির দাম কমেছে এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৯টির দাম কমেছে এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকেরও মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেনে হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকার। ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক, শাশা ডেনিম, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, শাহিনপুকুর সিরামিকস এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৩টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন