জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

মত ও পথ ডেস্ক

গাজায় খাবারের আশায় শূন্য পাত্র হাতে তাকিয়ে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি : আনাদোলু

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রস্তাবটি আটকে গেছে।

মূলত নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশের সমর্থন পেলেও ভেটো ক্ষমতাধারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় প্রস্তাবটি আটকে যায়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা সিনহুয়া ও সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার ওপর সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনা এক খসড়া প্রস্তাবে বুধবার ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই খসড়া প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশের সমর্থন পেলেও ভেটোক্ষমতাধারী একমাত্র সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয়।

সিনহুয়া বলছে, প্রস্তাবটিতে হামাসসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে আটক সব বন্দির অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও এর নিরাপদ বিতরণের ওপর আরোপিত সব বাধা তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্তভাবে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ভোটাভুটির ফলাফলের পর জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বলেন, “আজকের ভোটের ফলে চীন গভীরভাবে হতাশ। খসড়া প্রস্তাবটিতে গাজার মানুষের সবচেয়ে জরুরি দাবি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন ঘটেছে।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আবারও ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, গাজার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নৃশংসভাবে বিনষ্ট করেছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে অন্ধকারেই ফেলে রেখেছে।”

ফু আরও বলেন, “গাজায় সংঘর্ষ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার মূল কারণই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার বাধা প্রদান। একটি মাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো শান্তির অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারবে না।”

যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়ে বলেন, “গাজার অসহনীয় পরিস্থিতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েল সরকার যে মাত্রায় সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে এবং যেভাবে মানবিক সহায়তা আটকে রেখেছে, তা অগ্রহণযোগ্য, অমার্জনীয় ও ফলপ্রদ নয়।”

তিনি বলেন, ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা নতুন ব্যবস্থায় সাহায্য পৌঁছানোর পথ খুলেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্ষুধার্ত মানুষ যখন সাহায্যের আশায় এগিয়ে যায়, তখন তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এটা অমানবিক।”

আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা বলেন, “এই প্রস্তাব শুধু কয়েকটি দেশের কণ্ঠস্বর নয়, বরং গোটা বিশ্বের সম্মিলিত ইচ্ছা। এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি বার্তা: ‘তোমরা একা নও।’ আর ইসরায়েলি দখলদারদের জন্য একটি সতর্কতা: ‘বিশ্ব তোমাদের দেখছে’।”

তিনি বলেন, “এই প্রস্তাবপত্র এমনকি ভেটোর মাধ্যমে আটকে গেলেও বহুপ্রান্তিক ব্যবস্থার অনিঃশেষ ব্যথার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।”

এদিকে প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, “এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক দিন। গাজায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন নিয়ে এমন অবজ্ঞাসূচক বার্তা গভীর উদ্বেগজনক।”

তিনি বলেন, “এই ব্যর্থতা শুধু একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় নয়; এটি ভবিষ্যতে জবাবদিহি, ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এই মুহূর্তটিকে মনে রাখা হবে একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে, যেখানে পরিষদের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আবারও একটি সদস্য বাধা হয়ে দাঁড়াল।”

শেয়ার করুন