রংপুরের মাহিগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষায় রেখে মামলা নথিভুক্ত করেন মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কুদ্দুস। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত রেজোয়ানার পরিবারের সদস্যরা জানান, কাউনিয়া উপজেলার রেজাউল করিমের মেয়ে রেজোওয়ানার সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে মাহিগঞ্জ আরাজিমন খামার সরেয়ারতল এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ট্রাকচালক আব্দুল করিমের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে রায়ান ইসলাম নামে ১৩ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
বিয়ের পর থেকে ছয় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামীর পরিবার। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় রেজোয়ানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
সম্প্রতি রেজোয়ানার স্বামী একটি ট্রাক কেনেন। ওই ট্রাকের টাকা পরিশোধ করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা শ্বশুর বাড়ি থেকে আনতে চাপ দেন আব্দুল করিম। এতে রেজোয়ানা রাজি না হলে ঈদের পরদিন ৮ জুন কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন রেজাউল করিম।
পরে খবর পেয়ে মেয়ের বাবাসহ এলাকাবাসী রেজোয়ানাকে উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জুন মারা যান রেজোওয়ানা।
পরে মেয়ের মরদেহ বাড়ি রেখে রেজাউল করিম শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে মাহিগঞ্জ থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। কয়েক দফায় থানায় মামলা করতে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় রেজোয়ানার পরিবারকে।
নিহতের মামা রুবেল হোসেন সাদ্দাম অভিযোগ করে বলেন, ভাগ্নি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে তাদের বাসায় যাই। এরপর রাত ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে যাই থানায়। তখন ওসিকে না পেয়ে তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু ওসি বলেন, আপনার ভাগ্নি আত্মহত্যা করেছেন। হত্যা মামলা নেওয়া যাবে না। আমরা যেন আদালতে গিয়ে মামলা করি।
একপর্যায়ে রেজোওয়ানার স্বজনদের তোপের মুখে থানায় অবস্থানরত ট্রাকচালক আব্দুল করিমকে আটক করলেও দুজনকে ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় ওসি শনিবার সকালে এসে মামলা রেকর্ড ও আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। পরে থানায় এসে কালক্ষেপণ করতে থাকেন ওসি। একপর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে মামলা নথিভুক্তসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। অন্য দুজন হলেন রেজোয়ানার ননদ পারভীন ও তার স্বামী। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। রেজোওয়ানার শ্বশুর ও শাশুড়ি কহিনূর বেগম পলাতক।
রেজোয়ানার বাবা রেজাউল করিম বলেন, তিন মাস আগে ট্রাক কেনার জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করে। ঈদের দিন সন্ধ্যায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ির জন্য কাঁচা মাংস নিয়ে যাই। কিন্তু মাংস নিয়ে যাওয়ার পর মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা সন্তুষ্ট ছিল না। তারা টাকার জন্য বার বার মেয়েকে কথা শোনাতে থাকে।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এজাহারে কিছু ভুল থাকায় মামলা গ্রহণে বিলম্ব হয়েছে।
তবে তদন্তের আগে ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন- এমন কথা তিনি কীভাবে জানলেন, এ প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেননি ওসি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাহিগঞ্জ জোন) মারুফ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আটক তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।