ইরানে হামলা থেকে যেসব কারণে পিছু হটলেন ট্রাম্প

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অস্থির আচরণের জন্য বহুল পরিচিত। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার তিনি এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা থেকে খুব দ্রুতই আবার সরে এসেছেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতেও তাঁকে অস্থির আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে।

ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরুর একদিন আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ওমানে অনুষ্ঠেয় তেহরান-ওয়াশিংটন পরমাণু চুক্তি আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে এমন কোনো কাজ নেতানিয়াহু করবে না বলেই তাঁর বিশ্বাস। কিন্তু হামলার পরই অবস্থান থেকে সরে এসে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া শুরু করেন তিনি। এমনকি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার সক্ষমতার কথা জোর দিয়ে বলেন, তেহরান থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে বলেন এবং এমনকি ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। একাধিক গণমাধ্যমে খবর আসে, দু-এক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

কিন্তু ট্রাম্প এখন বলছেন, তিনি ‘কী করবেন কেউই জানে না’। তিনি এখনো কিছু করেননি। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প ‘আগামী দুই সপ্তাহের’ মধ্যে ইরান ইস্যুতে ‘সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বিশ্লেষকদের অনেকেই এই দুই সপ্তাহের আল্টিমেটামকে ট্রাম্পের পিছু হটা বলেই মনে করছেন। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণও আছে। ট্রাম্প শিবিরের বেশির ভাগ নেতাই ইসরায়েলের হয়ে ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিপক্ষে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ট্রাম্পের এক সময়কার প্রধান কৌশলী স্টিভ ব্যাননের কথা বলতে পারি।

স্টিভ ব্যানন বলছেন, ‘আমার বর্তমান পরামর্শ হলো—ইসরায়েলিরা যা শুরু করেছে তা তাদেরই শেষ করতে হবে। তারাই এটা শুরু করেছে। তাদেরই এটা শেষ করা উচিত। আমরা এটা (মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া) আবার করতে পারি না। আমরা (তাহলে) দেশকে ছিন্নভিন্ন করে দেব। আমরা আরেকটি ইরাক যুদ্ধ চাই না।’

একই ধরনের সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন ট্রাম্পের আরেক ঘনিষ্ঠজন, সাংবাদিক টাকার কার্লসন। তিনি স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি কথা বলছি, কারণ আমরা যদি এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি, তাহলে আমরা আমেরিকান সাম্রাজ্যের শেষ দেখতে পারি… এটি কার্যকরভাবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদের অবসান ঘটাতে পারে।’

কেবল ট্রাম্পের বাইরের বলয়ের ঘনিষ্ঠ লোকজন নয়, মার্কিন কংগ্রেসের অনেক আইনপ্রণেতাই চান না, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ট্রাম্পকে যুদ্ধে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন ট্রাম্প যেন কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা করতে না পারেন সে লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। টিম কেইন ছাড়াও বিরোধী শিবির মোটামুটি ট্রাম্পের এই যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার বিপক্ষে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক একাধিক জরিপে উঠে এসেছে, ৬০ শতাংশের বেশি মার্কিন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর বিপক্ষে।

আরেকটি বিষয়ও ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের নিরাপত্তা। ইরানের যে ক্ষেপণাস্ত্র আছে সেগুলো অনায়াসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন মিত্র দেশে অবস্থিত ঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। ফলে, ইরান আক্রান্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে—সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন, ইরাক ও সিরিয়া—থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো আক্রমণ করে বসতে পারে, যা সেই দেশগুলোর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। এ ছাড়া, ইরান এসব দেশে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ, এমনকি বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও উসকে দিয়ে এসব দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করতে পারে।

এই অবস্থায় অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো মিত্র দেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে ইরানে আক্রমণ চালাবেন কিনা সেটিও আমলে নেওয়ার বিষয়। এ ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো—বিশেষ করে সৌদি আরব—এখন অঞ্চলটিতে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী বলে মনে হয় না। কারণ, বিষয়টি দেশটির লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সৌদি আরব সামরিক শক্তি অর্জনের যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধ শুরু হলে তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি, ইরানে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ মানে ফিলিস্তিন ইস্যু চিরতরে চাপা পড়ে যাওয়া। আরব বিশ্বসহ, ইউরোপের কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এই বিষয়টি এড়াতে আরব এবং পশ্চিমা বিশ্বও ট্রাম্পকে চাপ দিচ্ছে।

এরই মধ্যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, ‘এখন সংঘাত আরও ঘনীভূত হওয়ার বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে। সব পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে।’ স্টারমার আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিমধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং সেই ধারাবাহিকতায় কূটনীতিই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত পথ। এই সমস্যার সমাধানে কূটনীতিই সেরা উপায় বলে জানান তিনি।

এর আগে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইরানে হামলা এবং সরকার উৎখাতের বিষয়ে স্পষ্ট বিরোধিতা করে বার্তা দেন। তিনি বলেন, বল প্রয়োগের মাধ্যমে তেহরানে সরকার উৎখাতের চেষ্টা হবে একটি কৌশলগত ভুল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, যাঁরা মনে করেন, বাইরে থেকে বোমা ফেলে কোনো দেশকে জোর করে ‘উদ্ধার’ করা যায়, তাঁরা বরাবরই ভুল করে এসেছেন।

এ ছাড়া, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দুই আলোচিত খেলোয়াড় চীন ও রাশিয়াও ট্রাম্পকে এই যুদ্ধে না জড়াতে চাপ দিচ্ছে। এই চাপ উপেক্ষা করা কঠিন। কারণ, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কৌশলগত মিত্র তাইওয়ান ও ইউক্রেন হাতছাড়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে জড়িয়ে পড়লে চীন তাইওয়ান ও রাশিয়া কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

যাই হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো সিদ্ধান্তে নেননি। তবে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়সীমা দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অবস্থানে সাম্প্রতিক পরিবর্তন দেখে কিছু বিশ্লেষকের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়তো স্পষ্ট কোনো কৌশল বা লক্ষ্য নেই। বরং তিনি সম্ভবত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্ররোচনায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। নেতানিয়াহু বহু দশক ধরে ইরানে মার্কিন হামলার প্ররোচনা দিয়ে আসছেন।

তবে আবার অনেকে মনে করছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক বক্তব্য হয়তো একপ্রকার চাপ সৃষ্টির মনস্তাত্ত্বিক কৌশল, যাতে তেহরান সম্পূর্ণভাবে তার পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, এ ধরনের জুয়া খেলা বা উত্তেজনা এক সময় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে যেতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সরাসরি সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে।

ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলেন, ট্রাম্প হয়তো ইরানকে তাঁর শর্ত ‘পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ’—মেনে নিতে বাধ্য করার জন্য হুমকি দিয়ে ‘লিভারেজ’ তৈরি করতে চাচ্ছেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি নিজেকে এমন একজন উন্মাদ, অবিমৃশ্যকারী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন, যাতে তিনি এমন এক কঠোর শর্ত দিতে পারেন যেন ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেয়।’

আবদি আরও বলেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ‘তিনি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছেন, যিনি তাঁকে ব্যবহার করছেন যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়ানো যায়।’

ইরানি-আমেরিকান বিশ্লেষক নেগার মোর্তুজাভিও বলেছেন, নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘চতুরভাবে কোণঠাসা’ করে ফেলেছেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আদৌ জানেন কিনা তিনি আসলে কী চান। তিনি নিজেকে শান্তির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরে বলেছিলেন, তিনি সংঘাত বন্ধ করবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। গাজায় আগুন আরও ছড়িয়েছে। আর এখন তাঁর চোখের সামনেই মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে—যেটা অনেকটা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের যুদ্ধের মতো। তিনি এক কথা বলেন, আর করেন আরেকটা।’

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাঁরা ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন। তবে তাঁরা এটিও বলছেন যে, এই সামরিক অভিযানের ফলে ইরানের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে—আর তারা মনে করছেন, সেটা হলে তা স্বাগত জানানোর মতো একটি ঘটনা হবে।

তবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ‘ফোরদো’ ধ্বংস করতে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন হবে, কারণ সেটি একটি পাহাড়ের ভেতর ভূগর্ভে অবস্থিত। মোর্তুজাভি বলেন, যুদ্ধপ্রেমীরা এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, ফোরদোতে বোমা ফেলাটা খুব সহজ কাজ।

তিনি বলেন, ‘একটা পূর্ণমাত্রার শাসন পরিবর্তনের যুদ্ধ খুবই ধ্বংসাত্মক এবং অপ্রয়োজনীয়, আর যার বিরুদ্ধে ট্রাম্প বারবার নির্বাচনী প্রচারে সরব থেকেছেন। এর বদলে ইসরায়েলিরা বিষয়টাকে এমনভাবে তুলে ধরছে যেন, একটা বাংকার বাস্টার ফেললেই কাজ শেষ!’

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার সেনা এখন মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে এবং তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়লে ইরান উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে—যা বৈশ্বিক জ্বালানির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন। ইরানি এমপিরা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, উপসাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ পরিবাহিত হয়।

ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক নেগার মোর্তুজাভি বলেন, এই সংঘাত যদি বাড়ে, তা পুরো অঞ্চলের জন্য ‘বিপর্যয়কর’ পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হবে যে, ইরাক আর আফগানিস্তানের যুদ্ধ একত্রে চললেও যেরকম লাগত, তার থেকেও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কারণ, ইরান একটি বিশাল দেশ।’

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেজিম চেঞ্জ’ যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয় ও আইএস-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটিয়েছিল। আর আফগানিস্তানে তালেবানকে রাজধানী কাবুল থেকে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর যুদ্ধ চালিয়েও শেষ পর্যন্ত তালেবানকেই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে দেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সরকার পতন ঘটে, তবে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে—এমনকি তা যুদ্ধ-পিপাসু মার্কিন রাজনীতিকদের কল্পনার চেয়েও বেশি ভয়ংকর হতে পারে। ইরানে ৯ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। সরকার পতনের পর সেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, শরণার্থী সংকট ও আঞ্চলিক—এমনকি বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। মোর্তুজাভি বলেন, ‘এটা কোনো রঙিন বিপ্লব নয়। এটা হবে যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা, সম্ভবত গৃহযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা।’

মানবাধিকার সংগঠন ডনের (DAWN) নির্বাহী পরিচালক সারা লিয়া হুইটসন বলেন, ট্রাম্প হয়তো হুমকি দিয়ে কেবল কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে চাচ্ছেন এবং সত্যিকারের যুদ্ধ বা সরকার পতনের চেষ্টা করছেন না, তবু তাঁর কৌশলটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘ইরানের ওপর হামলা শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক যুদ্ধের দিকে গড়ানোর সম্ভাবনাকেও প্রবল করবে। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী ভাষা ও শত্রুতাপূর্ণ আচরণ কেবল আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।’

ফলে, সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের সামনে ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থান থেকে পিছু হটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে কি?

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা

শেয়ার করুন