চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশের চেকপোস্টে সংকেত ভঙ্গ পালানোর চেষ্টা করে একটি মোটরসাইকেল। এরপর ওই মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা আরোহীকে ধাক্কা দেন এক পুলিশ সদস্য। এ সময় মোটরসাইকেলটির ধাক্কায় ট্রাকের নিচে পড়েন আরেক পুলিশ সদস্য। পরে ওই পুলিশ সদস্যের একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
রোববার (২২ জুন) সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া থানার আধুনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে ওই ঘটনায় চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার ২২ জুন, সকাল ৬টা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া থানার আধুনগর এলাকায় চলছিল লোহাগাড়া থানার পুলিশি টহল। এ সময় মোটরসাইকেলে করে কক্সবাজার থেকে মাদক কারবারি আসছে- এমন খবরে পাশের লিয়াকত পেট্রোল পাম্পের কাছে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসায় টহল টিম। চেকপোস্টে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তল্লাশিকালে সামনে আসে একটি ট্রাক। এ সময় ট্রাকের পেছনে দ্রুতগতিতে আসতে থাকা দুটি মোটরসাইকেলকে থামানোর সংকেত দেয় পুলিশ।
তবে সামনেরটি ট্রাক ও দুই পুলিশ সদস্যকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে যায়। পেছনে আসা আরেকটি বাইককে ট্রাকের পেছন থেকে থামানোর সংকেত দেন পুলিশের আরেক সদস্য। এ সময় মোটরসাইকেলটি গতি কমিয়ে সুযোগে আবারও গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। এরপর পাশ থেকে এক পুলিশ সদস্য বাইকে থাকা পেছনের আরোহীকে ধাক্কা দেন। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা আলাউদ্দিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে ধাক্কা দেয় বাইকটি। বাইকের ধাক্কায় পুলিশ কনস্টেবল আলাউদ্দিনের পা চাপা পড়ে পাশে চলতে থাকা ট্রাকের নিচে। পরে আহত কনস্টেবল আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রোববার দিবাগত রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয় কনস্টেবল আলাউদ্দিনের ক্ষতিগ্রস্ত পা।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ট্রাকটির চালক, হেলপার ও দুই বাইক আরোহীকে আটক করে মামলা দেয়।
থানা পুলিশের ভাষ্য, সংকেত না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে বাইকের আরোহীকে পেছনদিক থেকে ধাক্কা দেওয়ার কারণে মূল ঘটনাটি ঘটে।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ‘লোহাগাড়া থানার টহল টিম মহাসড়কের আধুনগর এলাকায় রোববার সকালে টহল দিচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাইকে করে মাদকের চালান নেওয়া হচ্ছে এমন খবরে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়। এ সময় দুইটি বাইকে থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। ট্রাকটিও দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। প্রথমে একটি বাইক সংকেত না মেনে চলে যাওয়ার পর পেছনের বাইকটিও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহত পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে তার ক্ষতিগ্রস্ত একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘মূলত সংকেত না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এতে ট্রাকের চালক, হেলপার ও দুই বাইক আরোহীর বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হয়েছে। তাদের রোববার আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে ওই ঘটনার একটি ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, পলায়নরত বাইকটির পেছনের আরোহীকে পুলিশের এক সদস্য ধাক্কা দিলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি সামনে থাকা আরেক পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই পুলিশ সদস্যের পা ট্রাকের পেছনের চাকার নিচে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাইক আরোহীকে ধাক্কা দেওয়া পুলিশ সদস্যের নাম মনসুর। তিনি লোহাগাড়া থানার কনস্টেবল।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম বলেন, ‘সংকেত না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে লোহাগাড়ায় ট্রাকের চাপায় এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ওই ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিও উদ্বৃত করে ঘটনাটিতে পুলিশ সদস্যের গাফিলতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেছি। এতে দেখা গেছে, পলায়নরত বাইকটিকে পুলিশের এক সদস্য পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছেন। এতে বাইকের সামনে থাকা পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিনের এক পা ট্রাকের নিচে পড়ে। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল আলম সান্তু’র অফিসিয়াল মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে জেলা পুলিশের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তিনিও রিসিভ করেননি। ফলে ঘটনাটির বিষয়ে জেলা পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।