ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন অনেকটা কেতাবি ঢংয়ে হয়ে থাকে। প্রতিপক্ষ দল নিয়ে ভালো কথা বলেন দলীয় প্রতিনিধিরা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি সনাথ জয়াসুরিয়াও বললেন, ভালো খেলে বাংলাদেশের জয়ে ফেরার সুযোগ আছে। আসলে ভালো খেলতে জানলে যে কোনো দল, যে কোনো কন্ডিশনে জিততে পারে। কেউ ভুল বুঝবেন না, বাংলাদেশ ভালো খেলতে জানে না, তা বলা হচ্ছে না। গত দেড় বছরের জয়-পরাজয় এবং দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে আপনি নিজেই দেখতে পাবেন যে কোনো ম্যাচে আংশিক ভালো খেলা দল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও আংশিক পারফরম্যান্স দেখেছেন। বোলিং ও ফিল্ডিং কাঙ্ক্ষিত মানে রাখতে পারায় স্বাগতিকদের ২৪৪ রানে বেঁধে ফেলা সম্ভব হয়েছে। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। ‘হঠাৎ ভুলে’ তা রঙচটে গেছে দ্রুতই। এই পারফরম্যান্সকে ক্রিকেটাররাও আংশিক ভালো বলছেন। আসলে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এভাবে জেতা ম্যাচ হারতে দেখলে সমর্থকরা খুব হতাশ হন।
লঙ্কানদের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ নিয়ে তাই উচ্চাশা থাকার কথা না। ফলে চাপহীন ক্রিকেট খেলার জন্য মেহেদী হাসান মিরাজরা উপযুক্ত একটি পরিবেশ পাচ্ছেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে সোনার হরিণ হয়ে ওঠা জয় ধরাও দিতে পারে।
প্রেমাদাসার উইকেট স্লো বলে বাংলাদেশ দলে যে চর্চা হচ্ছে, জয়াসুরিয়ার কথা সত্য হলে মিরাজরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতা আড়াল করতে ভালো দল উইকেটকে অজুহাত বানায় না। প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে লঙ্কান প্রধান কোচ জয়াসুরিয়া বলেন, ‘ব্যাটিং করার জন্য কন্ডিশন সত্যিই খুব ভালো ছিল। আউট ফিল্ড ও পিচ ভালো ছিল। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া কিছুটা সমস্যা করেছে। সেদিক থেকে আমরাও ব্যাটিংয়ে সংগ্রাম করছিলাম। এর পরও ২৪৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।’ খুব বেশি মন্থর না হলেও প্রেমাদাসার উইকেটে বুঝেশুনে খেলতে হয় বলে সাবেক ক্রিকেটারদের দাবি। সেট হলে ইনিংস লম্বা করার কৌশল নেওয়ার পরামর্শ দেন জাতীয় দলের সাবেক প্রেস বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকে। গেল ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত রানআউট হওয়ার পর এটা করতে হতো তানজিদ হাসান তামিমকে।
গত দুই দিনের টিম মিটিংয়ে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। প্রধান কোচ ফিল সিমন্স ডাক্তার দেখাতে ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে খেলোয়াড়দের গেম প্ল্যান দিয়ে গেছেন। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যেটা তামিম তুলে ধরলেন, ‘আমাদের একটা লম্বা আলোচনা হয়েছে গেল ম্যাচ নিয়ে। সেখানে কোচ কিছু তথ্য দিয়েছেন। শেষ ম্যাচে আমরা যেভাবে কলাপস করেছি, সেদিক থেকে সবার জন্য বার্তা এখানে– যে সেট হবে, তাকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। ওদের ভালো মানের বোলার থাকায় এই মাঠে খেলা একটু কঠিন। সেক্ষেত্রে হাসারাঙ্গার বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটারদের বেশি খেলা উচিত। কারণ বাঁহাতিদের বিপক্ষে সে অতটা কার্যকর না, যতটা ডানহাতিদের ক্ষেত্রে। সব বিষয়েই কিছু কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে, আশা করি সবাই তা কাজে লাগাবে।’
গত নভেম্বরে শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর টানা সাত ম্যাচে পরাজয়। এই ফল চোরা স্রোতের মতো র্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিকে টেনে নিচ্ছে টাইগারদের। এভাবে চলতে থাকলে ১০ থেকে ১১ নম্বরে যেতে বেশি সময় লাগবে না। মিরাজরা ভালো করেই জানেন এই সিরিজ দিয়ে জয়ের ছন্দে ফিরতে না পারলে ২০২৭ সালে সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন একটু একটু করে দূরে সরে যেতে পারে। এই ভয় থেকেই হয়তো লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ জিততে চান তামিমরা।
তিনি বলেন, ‘তিন ম্যাচের সিরিজে এখন দুই ম্যাচ আছে। আমরা চিন্তা করছি সামনের ম্যাচ নিয়ে। সিরিজে টিকে থাকার জন্য এই ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ আর গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেই কিনা খেলবেন না তাসকিন আহমেদ। গোড়ালির চোট পরিচর্যা করে সদ্য জাতীয় দলে ফেরা ৩০ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলারকে সফরে পাঁচ ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা আগেই দিয়েছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ। সে হিসেবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বিশ্রাম পাওয়ার কথা তাঁর।
জাতীয় দল সূত্রে জানা গেছে, শেষ ওয়ানডে এবং তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলবেন। তাঁর জায়গায় হাসান মাহমুদ বা নাহিদ রানাকে খেলাতে পারে দল। তবে দুই পেসার খেলালে স্পিনার একজন বাড়বে। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের সঙ্গে বাঁহাতি তানভীর ইসলামকে রেখে দেওয়া হতে পারে। যদিও অভিষেক ম্যাচে ভালো করতে পারেননি তিনি। মিরাজের বোলিংয়ে ধার কমে গেছে। টানা পাঁচ ম্যাচে উইকেটশূন্য তিনি। সুতরাং লঙ্কানদের বিপক্ষে জিততে হলে অধিনায়ক এবং তাঁর দলকে অলআউট ক্রিকেট খেলতে হবে। সেটা না পারলে পরাজয়ের বৃত্তবন্দি থেকে কাল ক্যান্ডি যেতে হবে মিরাজদের। এত নেতিবাচকতার মাঝেও বলতে হয় তবুও আশায় ঘরবসতি মিরাজদের।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, নাজমুল শান্ত, লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী মিরাজ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তানজিম সাকিব, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য একাদশ
নিশান মাদুষ্কা, পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, চারিথা আশালঙ্কা, জানিথ লিয়ানাগে, মিলান রত্নায়েকে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মহেশ থিকসানা, ইশান মালিঙ্কা, আসিথা ফার্নান্দো।