গোপালগঞ্জে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটুক্তির ফলে স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়তে হয় হাসনাত নাহিদ ইসলাম ও সারজিসরা। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে (এপিসি) করে সেখান থেকে বের হন। পরে তাঁরা সাঁজোয়া যানে করেই গোপালগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ চলাকালে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে ধরেন বিক্ষুব্ধ গোপালগঞ্জবাসী। তবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অবমাননাকর স্লোগান দিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয় জনতা। একপর্যায়ে তারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপি নেতা-কর্মীদের ঘিরে ধরেন । তাঁরা চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেন। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এনসিপির নেতারা তখন গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেন। বিকেলে এনসিপির নেতারা যে সাঁজোয়া যানে করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হন, এমন কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাঁজোয়া যানে উঠছেন।
জেলা পুলিশ কার্যালয়ে অবস্থানের সময় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন পরিস্থিতি ঠিক নেই।
১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। এর মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা করে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই পদযাত্রা ঘিরে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের গাড়িতে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে গেলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রাকিবুল হাসানের গাড়িতে হামলা করা হয়।
শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে বেলা পৌনে ২টার দিকে প্রথমবার হামলার ঘটনা ঘটে। তখন ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে গিয়ে হামলা চালান। সমাবেশ শেষ করার পর দ্বিতীয় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে বেলা পৌনে তিনটার দিকে। পরে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর জেলাটিতে আজ বুধবার রাত আটটা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে।