আমারে মা কওয়ার আর কেউ নাই: গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহত সোহেলের মা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

‘ওরে বাবারে। ওরে তোমরা কেন মাইরা ফেলাইলা। তোমাগোও তো মা আছে, মা কইয়া ডাকো না! আমারে মা কওয়ার আর কেউ নাই।’ বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলে জ্ঞান হারান সোহেল মোল্লার মা লাইলি বেগম।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পূর্ব মিয়াপাড়ায় সোহেল মোল্লার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৪ জনের একজন সোহেল মোল্লা। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

সোহেল মোল্লার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। গোপালগঞ্জের চৌরঙ্গীর কেরামত উদ্দিন প্লাজায় মুঠোফোনসামগ্রীর দোকান ছিল তাঁর।

স্বজনেরা চোখে–মুখে পানি দেওয়ার পর একপর্যায়ে জ্ঞান ফিরে আসে লাইলি বেগমের। তিনি আবারও বলতে থাকেন, ‘তোমরা কি আমার বাবারে আইনে দিতে পারবা? কী দোষ করছিল আমার বাবা। আমার বাবাকে কেউ কোনো দিন খারাপ কইতে পারে নাই। ও তো কোনো দল করত না। ওর কেন এমন হবে!’

মিয়াপাড়া এলাকায় চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সোহেল মোল্লা। ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার কক্ষে বসে আছেন সোহেলের ষাটোর্ধ্ব বাবা ইদ্রিস আলী মোল্লা। শোকার্ত এই বাবা বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলে কী করেছে? কী অপরাধ ছিল তার? কেন তাকে গুলি করে মারা হলো? আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

এ সময় পাশে থাকা সোহেল মোল্লার মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি মুঠোফোনে জানতে পারেন তাঁর ভাগনে সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তিনি জানান, তাঁর ভাগনের ময়নাতদন্ত হয়নি ও হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়নি।

স্বজনেরা জানান, সোহেলের লাশ হাসপাতাল থেকে এনে রাতে গোপালগঞ্জের বাসার নিচে রাখা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে টুঙ্গিপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। দাফন শেষে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আবার শহরের বাসায় চলে আসেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে যান সোহেল। দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি মুঠোফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে নিহত হন।

সোহেলের চার ও দুই বছর বয়সী দুটি ছেলেসন্তান আছে। তাঁর স্ত্রী নিশি বেগম বলেন, ‘কী অপরাধে আমার সন্তানদের এতিম করা হলো? আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করত না। সে ব্যবসা আর বাসা, এর বাইরে তার আর কোনো কিছুই ছিল না। প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে যেত। আর কোনো দিনই মাকে জড়িয়ে ধরা হবে না তার!’

সোহেলের স্ত্রীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখনো কাঁদছিলেন লাইলি বেগম। বলছিলেন, ‘আমাগো বাড়ি গোপালগঞ্জ হইতে পারে। আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না বাবা। তার কেন এই হইলো?’

শেয়ার করুন