দক্ষিণ সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহত প্রায় ৬০০

মত ও পথ ডেস্ক

সিরিয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সংগৃহীত ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩০০ জনই ধর্মীয় সংখ্যালঘু ড্রুজ গোষ্ঠীর সদস্য।

এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা। শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৫৯৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানায়, গত রোববার থেকে সুয়েইদা প্রদেশে এই ভয়াবহ সহিংসতা শুরু হয়।

এসওএইচআর-এর তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৩০০ জনই ধর্মীয় সংখ্যালঘু ড্রুজ গোষ্ঠীর সদস্য। আর তাদের মধ্যে ১৪৬ জন যোদ্ধা এবং ১৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে অন্তত ৮৩ জনকে সরকারি বাহিনী সরাসরি হত্যা করেছে বলেও উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই সংস্থাটি।

এছাড়া সহিংসতায় সরকারি বাহিনীর ২৫৭ জন সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন। পাল্টা হামলায় ড্রুজ যোদ্ধারা ৩ জন বেদুইন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলেও জানায় এসওএইচআর।

আল জাজিরা বলছে, ড্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতার সূচনা হয়।

তবে সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস নামে অন্য একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে চলমান এই সহিংসতায় অন্তত ১৬৯ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর কথা নথিভুক্ত করেছে। আর সিরিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০।

এছাড়া, ইসরায়েল সিরিয়ার ড্রুজদের রক্ষার অজুহাতে সিরিয়ার সেনা অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এতে আরও ১৫ জন সরকারি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল জানায়, তারা শুধু ড্রুজদের সুরক্ষা দিতে এবং সরকার বাহিনীকে সুয়েইদা থেকে সরাতে এই হামলা চালিয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, বৃহস্পতিবার সুয়েইদায় আপাতত অস্থায়ী শান্তি বিরাজ করছিল। সরকারি বাহিনী শহর থেকে সরে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা শহরে লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ ও রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার কথা জানিয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার থেকে সরকারি বাহিনীর ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন অংশ সুয়েইদা শহরে প্রবেশ করে ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে’ চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং ড্রুজ সমাজের ভেতরেও বিভক্তি দেখা দেয়।

সিরিয়ার ড্রুজ সম্প্রদায় শিয়া ইসলাম থেকে উদ্ভূত একটি ধর্মবিশ্বাস অনুসরণ করে এবং তারা সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র ধরেছে। প্রভাবশালী ড্রুজ নেতা শেইখ হিকমত আল-হাজরি সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আমাদের প্রদেশকে সরকারি বাহিনীর গ্যাংদের হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ড্রুজ সম্প্রদায়ের একাংশ সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও দখলকৃত গোলান মালভূমিতে ড্রুজদের একটি উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা রয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় বলপ্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। আমরা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেব না, আর ড্রুজদের ক্ষতিগ্রস্ত হতেও দেব না।”

শেয়ার করুন