গোপালগঞ্জ ট্র্যাজেডি: চার দিনের মাথায় ৪ হত্যা মামলা, আসামি ৬ হাজার

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জে জনসমক্ষে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির বিরুদ্ধে। ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তির প্রেক্ষাপটে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলা চালায় স্থানীয় জনতা। এ ঘটনায় সেদিনই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে চারজন এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে প্রথম চার মৃত্যুর ঘটনার চার দিনের মাথায় চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে । প্রতি মামলাতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতিকারীকে আসামি করা হয়েছে!

শনিবার রাতে এসব মামলার তথ্য আজ রোববার নিশ্চিত করেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান। এ ঘটনায় আরও একটি হত্যা মামলা হবে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে কিশোর রমজান কাজী হত্যার ঘটনায় মামলা করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, এনসিপি নেতাকর্মীরা গত বুধবার দুপুরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। তারা গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ দুষ্কৃতিকারীরা গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অপর তিন মামলার বর্ণনা ও আসামির সংখ্যা একইরকম। দীপ্ত সাহার (২৭) মৃত্যুর ঘটনায় সদর থানার এসআই শামীম হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতিকারীরা দুপুর আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসীর সামনের দীপ্ত সাহা গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সদর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে সোহেল রানা মোল্লা (৩০) হত্যার ঘটনায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, লঞ্চ ঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে সোহেল রানা আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়। একইদিন লঞ্চ ঘাট এলাকার পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে আ্ওয়ামী লীগসহ দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে ইমন তালুকদার (১৭) নিহত হ্ওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান। দুই মামলাতেই ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিকশাচালক রমজান মুন্সী (৩২)। এই ঘটনাতেও একটি হত্যা মামলা হবে। রমজান মুন্সী ছাড়া অপর চারজনের মরদেহের সুরতহাল প্রতবেদন তৈরি বা ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, বিলম্বে হলেও ময়নাতদন্ত করা হবে। যদিও দীপ্ত সাহার লাশ দাহ করে ফেলায় সেক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত হবে জানা যায়নি।

শেয়ার করুন