শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনায় আমরা শোকাহত

সম্পাদকীয়

বিমানটির ধ্বংসাবশেষ বের করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফাইল ছবি

রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের অঘটনে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মর্মান্তিক এই ট্র্যাজেডি কেবল হতাহতগণের পরিবার ও প্রতিষ্ঠান নয়; বরং সমগ্র জাতির জন্যই অপরিমিত বেদনা ও অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা জানি, কোনো বাক্যই শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে না। তবুও আমরা এতটুকু বলতে চাই, তাদের গভীর বেদনা আমাদেরও স্পর্শ করেছে; তাদের সাথে আমরাও সমমর্মী। মর্মান্তিক এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৭৮ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাণহানি আরও অনেক বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই (F-7BGI) বিমানটির জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লিটার। ধারণা করা হচ্ছে, বিমান আকাশে ওঠার ১২ মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হওয়ায় তেলের ট্যাংকি অনেকটা ভরা ছিল। আছড়ে পড়ার পর বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তেল ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে সবখানেই আগুন লেগে যায়।

জানা যায়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এর আগে গত এক দশকে এফ-৭ যুদ্ধবিমানের একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তখন সম্ভাব্য কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি পুরনো যন্ত্রাংশ, কিংবা জরুরি মুহূর্তে ইজেকশন সিট কাজ না করার মতো মারাত্মক সমস্যা উল্লেখ করা হয়।

তবে মাইলস্টোনে গতকালের দুর্ঘটনায় আবারও আলোচনায় এই বিমানের কার্যক্ষমতা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনার বিষয়টি। জানা যায়, আধুনিক আকাশযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রাডার, নেভিগেশন ও অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে এটি অনেকটাই পিছিয়ে। তাই আমরা মনে করি, এখন সময় এসেছে সম্মানের সঙ্গে এই পুরনো আকাশযোদ্ধাকে অবসর দেওয়ার। কারণ, বারবার ফিরে আসা দুর্ঘটনার খবর শুধু হারানো জীবনের করুণ গল্পই বলে না, বলে একটি যুগের সমাপ্তির কথাও।

আরেকটি কথা, গতকালের বিমান দুর্ঘটনার কারণ, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। আমরা চাই, এ ঘটনায় ‘ভালো রকমের তদন্ত’ করা হোক।

শেয়ার করুন