গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে তার বরখাস্তের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিলসহ বিভিন্ন অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তির দায়ে গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের গাজীপুর মহানগরীর সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তার দলীয় সদস্যপদও বাতিল করা হয়।
মেয়র পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডার, A request for quote (RFQ), কর্পোরেশনের বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতি বছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
‘তাছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ব্যতীত রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়ে অভিযোগটির বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মতামত জানতে চাওয়া হলেও কোনো মতামত দেননি জাহাঙ্গীর। যা ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিধি-নিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ। দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল এই ধরনের কাজ সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৩(১)(ঘ) অনুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ।
‘যেহেতু এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে, সেহেতু সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৩ ধারামতে তাকে অপসারণের কার্যক্রম আরম্ভ করা হলো। সিটি কর্পোরেশনের ধারা ১২(১) অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
‘এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এর ধারা ১২(২) অনুযায়ী এই আদেশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নিকট তার দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।’
জাহাঙ্গীরের বিষয়ে যা বললেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বরখাস্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। এর মধ্যে সরকারি সম্পদের অপব্যবহার, জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করা, জায়গা দখল, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ আছে। সেগুলো তদন্তের স্বার্থে এখন বলা যাচ্ছে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি/ মেয়রের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে এবং তদন্তের নিষ্পত্তির জন্য আমলে নেওয়া হয় তাহলে আইনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম আছে।’
জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন কবে দেওয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নথি আমলে নিয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত আরম্ভ হয়েছে। কত দিন লাগতে পারে সেটি এখন বলা মুশকিল। তদন্তে নতুন অনেক কিছু যুক্ত হতে পারে।’
ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।