আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির দুই যুগ পূর্তি। পার্বত্য চুক্তির ২৪ বরছর পরও চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে হতাশা আর ক্ষোভ। হানাহানি আর সঙ্ঘাতে পার্বত্য অঞ্চল এখনো রয়েছে অশান্ত । এক হিসাব মতে, গত এক বছরে পাহাড়ে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ১৮ জন । উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্র গোলাবারুদ। আটক হয়েছে প্রায় ৩০ জন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭৫ পরবর্তী প্রায় দুই দশকের সঙ্ঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি নামে অবহিত।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর পর পার্বত্য এই চুক্তির দুই যুগ কেটে গেলেও পাহাড়ে এখনো এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে টানাপোড়েন লেগেই আছে। পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
পাহাড়ি মানুষেরা মনে করেন , বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছেন। দীর্ঘ ২৪ বছর চুক্তির বাস্তবায়ন না করায় আমরা হতাশ। সাধারণ বাঙালীরা মনে করেন বিগত বছর গুলোতে চুক্তির পরও শান্তি আসেনি। উন্নয়ন ও সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত বাধা প্রাপ্ত হয়েছে। এখনো ব্যবসা বানিজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়নি।
শ্রমিক লীগের নেতা শামসুল আলম জানান, শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ি বাঙালী মনে শঙ্কা ভয় ও বিভেদ দূর হয়ে গেছে। ভ্রতিৃত্বের বন্ধনে সকলে চলাফেরা করছে। তবে কিছু সমস্যা এখনো আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটু তৎপর হলেই এ সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
মৎস্যজীবি লীগের আহ্বায়ক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, শান্তি চুক্তি এখনো সফল ভাবে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। যদি দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয় তাহলে পাহাড়ের মানুষ উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে । আখানকার মানুষের আয় উন্নতি বৃদ্ধি পাবে। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
পার্বত্য শান্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় পাহাড়ের দুর্গম এলাকা গুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এরপরও পক্ষে বিপক্ষে বিভেদ তৈরি হওয়ায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে থমকে দিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন,পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ১৯৯৭ সালে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রায়ই পূরণ হয়নি ।
তিনি বলেন, সংবিধানে যে সব অধিকারের কথা বলা আছে তাও আমরা উপভোগ পারছি না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, চুক্তির যে কনসেপ্ট ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি । চুক্তির ২৪ বছরে জেলা পরিষদ গুলোর নির্বাচন হয়নি।
বিগত দুই বছরে করোনা পরিস্থিতি কারণে শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানান রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার।
তিনি বলেন, চুক্তির বিষয়ে পরিবিক্ষণ কমিটি শীঘ্রই কাজ শুরু করবে।
এদিকে সরকার ও জনসংহতি সমিতি দু’পক্ষই পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। করোনার বিধি নিষেধ থাকায় র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ প্রভৃতি অনুষ্ঠানগুলো এবছর বাদ দেওয়া হয়েছে। সকল মানুষের অংশগ্রহণে শুধু একটি আলোচনা সভা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভবন ও বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে আলোক সজ্জা এবং রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম রোডের বিভিন্ন স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হবে।