৩ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু

মত ও পথ রিপোর্ট

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। পদে পদে মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তারা একের পর এক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে পাক সেনাদের ফাঁদে ফেলেন। এদিনে ভারতীয় পূর্বাঞ্চল কমান্ডের লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার অধিনায়কত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের ভারত যৌথ কমান্ড। ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত হলো মিত্রবাহিনী। ওইদিন গভীর রাতেই মিত্রবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্ত এলাকায় অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়।

যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায় গঠিত মিত্রবাহিনী, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধরত বাংলাদেশের সশস্ত্র ও মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় নবম ডিভিশন গরীবপুর-জগন্নাথপুর হয়ে যশোর ঢাকা মহাসড়কসহ চতুর্থ ডিভিশন ষষ্ঠ ডিভিশনের বেশ কয়েকটি এলাকায় যোগাযোগ পথে (রুট) বাংলাদেশে প্রবেশ করে।এতে করে যশোর কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, জেলার আরো কয়েকটি থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে।

universel cardiac hospital

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার এক জনসভায় ভাষণদানকালে ভারতের বিমানবাহিনীর স্থাপনা ও রাডার স্টেশনগুলোতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী। এতে করে ভারতজুড়ে জারি হয় জরুরি আইন। সে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্তপর্ব।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আজ বাংলাদেশের যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।যুদ্ধ মোকাবিলায় দেশকে তৈরি করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড দুর্বার বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে। গভীর রাতে পূর্ণাঙ্গ লড়াই শুরু হয়। চতুর্দিক থেকে বাংলাদেশের দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ শুরু করল ভারতীয় সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনী। আর মুক্ত এলাকা থেকে যোগ দিল বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। ভারতীয় নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সমস্ত পাক অধিকৃত বন্দর অবরোধ করে জলপথে সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। আক্রমণের প্রথমেই হানাদার বাহিনীর সাবমেরিন গাজীকে বঙ্গোপসাগরে সলিল সমাধি ঘটানো হয়। পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়। এদিন ১১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী কামালপুর বিওপি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

শেয়ার করুন