নিজেদের আত্মরক্ষায় গোলাগুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জন সদস্য মারা গেছেন উল্লেখ করে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ভবিষ্যতেও আমরা মানবাধিকার রক্ষায় জীবন দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করব।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান সাত র্যাব কর্মকর্তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ অপরাধী আত্মসমর্পণ করেছে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। র্যাবের এমন মানবিক আত্মসমর্পণের সুযোগ বিশ্বের কোনো বাহিনী দেয়নি।
কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা সবসময় মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। অপরাধীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে আমরা মানবিকতার নজির স্থাপন করেছি। আমরা বলব, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, র্যাব মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে।
সুন্দরবনের দস্যুমুক্তের কথা উল্লেখ করে র্যাব মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, আপনারা বলেছেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়েরা বলেছেন, আজকে র্যাবের আভিযানিক সাফল্যের কারণে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ (উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলে) যে চরমপন্থীরা ছিল এটা কিন্তু প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। র্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। আমরা সুন্দরবন দস্যুমুক্তের তৃতীয় বর্ষ পালন করেছি। খুব কম দেশেই এমন নজির রয়েছে যে, সুন্দরবনের মতো একটা বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল দস্যুমুক্ত হয়েছে। আপনারা জানেন, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে, এখানে গুলি বিনিময় হয়েছে। এটাও দেখেছেন সুন্দরবনে ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের পুনর্বাসনে র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে, আমরা তাদের ঘর দিয়েছি, গরু দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের পুনর্বাসনে যা যা করা দরকার আমরা তাই করেছি। বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় যে জলদস্যু রয়েছে তারাও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বের কম বাহিনী রয়েছে যারা এমন নজির রেখেছে।
র্যাব একটি এলিট ফোর্স, যেখানে বিভিন্ন বাহিনীর চৌকস সদস্যদের নির্বাচন করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বাহিনীতে আনা হয় উল্লেখ করে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘এই বাহিনীর নিজস্ব যে আইন বা নিয়ম রয়েছে তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। র্যাবই সেই বাহিনী, যারা প্রথম নিজ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্টের’ মাধ্যমে দেখে বাহিনীতে কোনো মাদকাসক্ত সদস্য রয়েছে কি-না।’
কিশোর গ্যাং ও করোনাকালে নিজেদের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন ইস্যুতে র্যাব মানুষের আস্থা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনা মহামারির সময়ে সন্তান বাবা-মাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে। র্যাব এসব রোগীকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে র্যাব জীবন দিয়েছে। ভবিষ্যতেও মানবাধিকার রক্ষায় জীবন দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাবে।’
ক্রসফায়ার প্রসঙ্গে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, গুলিবিনিময়ের যে ঘটনা বা ক্রসফায়ার আমরা বলে থাকি; আমরা মনে করি একটি দেশের সুস্থ বা স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে নিজের আত্মরক্ষার যে অধিকার এটা কিন্তু দেশের আইন দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানে যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আমরা যখন প্রতিরোধের শিকার হয়েছি বা আমাদের ওপর যখন সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে তখনই আমরা গুলি করেছি। এই গুলি বিনিময়ে আমাদের এখন পর্যন্ত ২৮ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করা হয় এই গুলি বিনিময় যথার্থ ছিল কি না। যদি যথাযথ না থাকে, তাদের বিরুদ্ধে র্যাব যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব দপ্তর)। এতে র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটি।
মার্কিন রাজস্ব দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিবৃতি অনুসারে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় বর্তমান পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদের নাম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছেন- র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ (কেএম) আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান ও র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মিফতাহ উদ্দীন আহমেদ।