নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে সময়োপযোগী ও জরুরি উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। সম্মিলিত বিবৃতিতে তারা এই সংলাপের সাফল্য কামনা করেছেন।
আজ বুধবার দেওয়া বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, আশা করি আজকের ক্ষীণ গণতন্ত্রের বাংলাদেশে এখন আবার নতুন করে গণতন্ত্র চর্চা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সম ও ন্যায্য প্রয়োগ এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বময় ও বণ্টনব্যবস্থাকে সাম্যমূলক করে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ঐক্যমতের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলাপ-আলোচনা করবেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশ কিছু মাপকাঠিতে দেশের প্রশংসনীয় সাফল্য এসেছে। তবে মুদ্রার অপর পিঠ, অর্থাৎ নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সমপ্রয়োগ, বাক-স্বাধীনতা, সভা সমিতির অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতন এবং আনুষঙ্গিক অনেক মাপকাঠিতে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। বৈষম্যের হারও আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানের ক্রমাবনতি এখন অনস্বীকার্য। এসব ছাড়িয়ে আমাদের উদ্বেগের আরেকটা বড় কারণ আমাদের রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতার অবনতি। তিন দশক আগের, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রণীত তিন রাজনৈতিক জোটের রূপরেখায় যে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে আমরা ক্রমাগতভাবে পেছনে হেঁটেছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা এও আশা করি, এই আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ব্যাপারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা খসড়া প্রস্তাবনা প্রণীত হবে। যাতে বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের রূপকল্পও স্থান পাবে। আমাদের প্রত্যাশা যে, সেই সাথে মানবাধিকার সংক্রান্ত আমাদের ব্যাপক এবং প্রকট বিচ্যুতি নিরসনের নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোও রচিত হবে। আমরা আরও আশা করি যে, দলগুলোর মধ্যে ‘তিন জোটের রূপরেখার’ আদতে একটা ঐকমত্য সৃষ্টি হবে। একইসাথে, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৫) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মন্ত্রিপরিষদের বিবেচনার জন্যে পাঠানোর আশাও করছেন বিশিষ্ট এই নাগরিকেরা।
বিবৃতি দেওয়া ৩৭ নাগরিক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ফেমা’র সভাপতি মুনিরা খান, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
অন্যরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্র শিল্পী ড. শহিদুল আলম, ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক ও গবেষক স্বপন আদনান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯ এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, মানবাধিকারকর্মী ড. ফস্টিনা পেরেরা এবং মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।