সাবিনা আক্তার তুহিনকে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। ৪ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পরও কোনো জবাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যুব মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২১/১২/২০২১ তারিখ যুব মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক অদক্ষতা, সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সভাপতি সহকার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের কারণে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’ প্রদান করা হয়েছিল।দুঃখের বিষয় সাত কার্যদিবস অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনার কাছে থেকে কোনো উত্তর/জবাব না পাওয়ার কারণে গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও ১২(খ) ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে আপনাকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদককে এই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের এই নেতাকে চারটি বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সেগুলো হলো-
(১) গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ মহান বিজয় দিবস উৎযাপন এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের পূর্বে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তারসহ অনেককে অপমান, নাজেহাল এমনকি শারীরিকভাবে আহত ও লাঞ্ছিত করেছেন। জাতির পিতার রক্তের স্মৃতি বিজড়িত ওই ৩২ নম্বর বাড়ি আমাদের পবিত্র স্থান, আমাদের আবেগ, অনুভূতির জায়গা। সুবর্ণজয়ন্তীর একটি ঐতিহাসিক দিনে আপনার ও আপনার কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির অনেককে চোখের জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো! এর প্রকৃত এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করুন।
(২) আপনি ২৪/০৭/২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব নেবার প্রায় সাড়ে চার বছরেও কোনো থানা, ওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করেননি। এর ফলে দলীয় কর্মীরা পদ এবং অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। সাংগঠনিক নিয়ম মেনে আপনার দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত না করার ফলে দল সুসংগঠিত নয় অথচ পদ আঁকড়ে আছেন। এর সুনির্দিষ্ট এবং যথাযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করুন।
(৩) নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ‘গাপিয়া’ আপনার দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধু। তার অপকর্মের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া সংগঠন যুব মহিলা লীগ দেশে বিদেশে অনেক সমালোচনার মুখে পড়ে। আপনার বিরুদ্ধে পাপিয়াকে প্রশ্রয় দেবার অভিযোগ আছে। এর প্রকৃত কারণ যোগ করুন।
(৪) আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘১৭/১২/২০১১ নাজমা আক্তার ১/১১ এর সময় আপনাকে কোর্ট ও সাবজেলে যেতে নিষেধ করেছিল এবং নাজমা আক্তার জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অংশ না নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন।’ আপনার উপরোক্ত বক্তব্যের উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ আপনাকে হাজির করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এমতাবস্থায়, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার ব্যাখ্যাসহ আপনার লিখিত জবাব ২২/১২/২০২১ তারিখ থেকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে যুব মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হলো এবং একই সাথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে যুব মহিলা লীগের সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সাবিনা আক্তার তুহিন ২০১৪ সালে সংরক্ষিত নারী আসন-৩৫ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে তার জায়গা হয়নি।