বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাওয়া যায়নি: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে আমরা শুধু ছাত্রলীগ সংগঠন করতে নামি নাই, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে আমরা সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য মাঠে নেমে ছিলাম। কারণ তখন আওয়ামী লীগ সামনে ছিল না, আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুবলীগ সামনে ছিল না, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে কাজ করছিল। আর অন্যদের কোনো পাত্তা ছিল না। আমরাই ছিলাম সামনে। আমরাই সেদিনকার নেতা ছিলাম।

৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও পঁচাত্তর পরবর্তীকালে নভেম্বর মাসে একটি মিছিল বের হয়েছিল সেই মিছিলেও এই অধম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নেতৃত্ব দিয়েছিল। এরআগে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো মিছিল হয় নাই। আর প্রিয় বন্ধু নবীনগরে শাহাজুল আলমকে (প্রয়াত) নিয়ে আমরা বহু গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক করেছি। আজকে আমি তাঁর কথা শ্রদ্ধাসঙ্গে স্মরণ করছি।

সাবেক ছাত্রনেতা মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ হলো পৃথিবীর একমাত্র ছাত্রসংগঠন, যারা একটি দেশের জন্মের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে বলতেন ‘ভ্যানগার্ড অব দ্যা পার্টি’/ দলের অগ্রবাহিনী। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন এরচেয়ে বড় সংজ্ঞা আর কখনো হয় নাই। তিনি বলেছেন ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস-বাঙালির ইতিহাস’।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর ফেব্রুয়ারিতে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তদানিন্তন সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি প্রদানে দাবি জানিয়েছিলেন। তারপর ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির অন্যতম অঙ্গসংগঠন হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছিল।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, ছাত্রলীগ যদি না থাকত তাহলে সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙা হতো না। ১৪৪ ধারা ভাঙার দুঃসাহস ছাত্রলীগ দেখিয়েছিল। ৫৪ সালে যে নির্বাচন হয় সেখানেও ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। ৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তার বিরুদ্ধে যে গোপন আন্দোলন শুরু হয় সেই আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অংশগ্রহণ করে। ৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে যে বিরাট আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল সেখানেও নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রলীগ। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমগ্র পাকিস্তানে যে আন্দোলন হয়েছিল সেখানেও নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগ। ৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন পুরোটাই ছাত্রলীগ করেছে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল এক নম্বরে, আওয়ামী লীগ ছিল তার পরে। ছাত্রলীগ-ই প্রথম জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিল, এরআগে কেউ জয় বাংলা স্লোগান দেয়নি। আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ- এই স্লোগান ছাত্রলীগ-ই প্রথম উচ্চারণ করেছিল। পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা- এই স্লোগান প্রথম ছাত্রলীগ উচ্চারণ করেছে। ছাত্রলীগের আগে স্বাধীনতার কথা দৃঢ়তার সাথে কেউ বলেনি।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, আমরা সত্তরের নির্বাচনের সময় জনগণকে বলেছি, ছয় দফার সংগ্রাম করছি সেটি না হলে আমরা এক দফাতে যাবো। তারমানে স্বাধীনতায় যাবো। বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় আমরা এ অবস্থায় গিয়েছিলাম। সুতরাং ছাত্রলীগ ছিল সবসময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রবাহিনী হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরেও আওয়ামী লীগ বলে যখন কোনো দল ছিল না তখন আমরা যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম তাঁরাই আন্দোলনে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজকে কখনো কখনো মনে হয় ছাত্রলীগ যেন পিছিয়ে পড়ছে, আমার মনে হয় এই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে।

তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে, সেটিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের, একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি একটি বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেটি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে বলে গিয়েছেন। কাজেই সেই ধারাকে ধারণ করে, ছাত্রলীগের পূর্ব গৌরবের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আমাদেরকে নতুন ঐতিহ্য বিনির্মান করতে হবে, নতুন ইতিহাস রচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন