রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) বাসিন্দারা বেছে নেবেন তাদের নতুন মেয়র। ঢাকার পাশের এই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াইয়ে থাকছেন বিএনপির বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
আগামীকাল রোববারের এই ভোটে জিতলে নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন আইভী। ২০১১ সালে নির্দলীয় ভোটে আওয়ামী লীগের নেতাদের সমর্থনপুষ্ট এ কে এম শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
পরের বার ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে আইভী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটে হারান। নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আইভী ৮ বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এবারের নির্বাচনে এই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকারকে দেখা হচ্ছে। তার প্রতীক হাতি। নির্বাচনে নেমে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ হারানো তৈমূর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে দলের নির্দেশে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান।
বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ২০১৮ সালে গ্রেফতার হওয়া এই বিএনপি নেতা এবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করেই ভোটের মাঠে নেমেছেন। আছেন প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জের নগরপিতা হওয়ার আশায়।
সিটি করপোরেশনের ভোটে জিতে সেলিনা হায়াৎ আইভী হ্যাটট্রিক করবেন নাকি তৈমূর আলম খন্দকারের অভিষেক ঘটবে, তা জানা যাবে ভোটের শেষেই। নগরের নতুন অভিভাবক যিনিই হোন, বরাবরের মতো তার কাছে বাড়তি প্রত্যাশা থাকবে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের।
ভোটের আগের প্রচারণার দিনগুলোতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে আইভী ও তৈমূরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। যদিও ব্যক্তিগত ইমেজে তৈমূরের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে আইভী।
অবশ্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আইভীকে এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। পাশাপাশি তৈমূরকে কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও স্থানীয় বিএনপির সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কিছু অংশ এবং বিএনপি ও নৌকাবিরোধী পক্ষের ভোট তৈমূর নীরবে পেয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। ফলে আগের দুবার বিপুল ভোটে জয়লাভ করা আইভীকে এবার জিততে বেশ বেগ পেতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮৭টি ভোটকেন্দ্রে এই ভোট হচ্ছে। মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯। তৃতীয়লিঙ্গের ভোটার আছেন চারজন। সবকটি কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএমে।
সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং তৈমূর আলম খন্দকারের পাশাপাশি মেয়র পদে আরও চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটে তাদের নির্বাচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নয় ওয়ার্ডে ৩৪ জন নারী প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন। এর মধ্যে ২১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৯ আসামি, যাদের বিরুদ্ধে খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা আছে। এমনকি কারাভোগ করা আসামিরাও এই নির্বাচনে লড়ছেন।
এদিকে নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। ভোটের আগের দিন শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জায়েদুল আলম বলেন, নির্বাচনে কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। নির্বাচনের দিন কোনো বহিরাগতকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেবো না। ভোটের দিন সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে চলাচল করতে দেওয়া হবে।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহও। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। ইলেকশন শান্তিপূর্ণভাবে হবে।
জানা গেছে, নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ সদস্য। যে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকবেন।