এটাকে ‘আওয়ামী খাস কমিটি’ বলাটাই যুক্তিযুক্ত : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজভী
ফাইল ছবি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে যে সার্চ কমিটি করা হয়েছে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এটাকে ‘সার্চ কমিটি’ না বলে বরং ‘আওয়ামী খাস কমিটি’ বলাটাই যুক্তিযুক্ত মনে করি। এরা ভুপেন হাজারিকার সেই গানের মতো ‘মোরা যাত্রী একই তরণীর’। এরা একই ঝাঁকের কৈ।’

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ করার বিকল্প নেই এমন দাবি রিজভীর। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নয়, জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।

রাষ্ট্রপতি গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি নিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ মুজিবকোট পরা লোকেরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন, সেই সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোট পরা লোকদের বের করে আনবে। নবগঠিত এই সার্চ কমিটি সেই অনুমানেরই নিরেট বাস্তবতা।’

কমিটির সদস্যরা ‘আওয়ামী লীগের’চেতনার মানুষ এমন দাবি রিজভীর। তিনি বলেন, ‘এরা কে আওয়ামী লীগের কোন পজিশনে ছিলেন এবং আছেন তা নিয়ে দেশের সচেতন জনগণের মধ্যে চলছে যে আলোচনা চলছে তা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ পরিবার দ্বারা আরেকটি নীল নকশার ভোট ডাকাতির নির্বাচন কমিশন গঠন করতে নিখাদ আওয়ামী লীগের চেতনার মানুষদের অনুসন্ধান করাই এই সার্চ কমিটির অভীষ্ট লক্ষ্য।’

রিজভী আরও বলেন, ‘বর্তমান সার্চ কমিটির প্রধান আগের দুটি সার্চ কমিটিরও সদস্য ছিলেন। সার্চ কমিটির প্রধান ওবায়দুল হাসান ও তার পরিবার পরীক্ষিত আওয়ামী লীগার। তিনিও আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী ছিলেন। তার পরিচয় তিনি বাকশাল ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলেন। এদের সুপারিশেই নিয়োগ পেয়েছিলেন রকিব ও হুদা কমিশন। এরা নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আরেক বিশেষজ্ঞ, এই সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন সাবেক বহু বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন। ২০১৮ সালে সিলেট-১ (সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশন) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। রাজবাড়ী শহরের ভবানীপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম হামিজ উদ্দিন শেখের পুত্র কুদ্দুস জামান। এই কুদ্দুস জামান এই সার্চ কমিটির সদস্য। তার ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।’

‘আরেক সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক জন্মান্ধ আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের একান্ত অনুরাগী ও দৃঢ় সমর্থক প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী তিনি। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মেডিকেল সেন্টারে চাকরি করেছেন।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলবো এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন। দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না। ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে কোনো কিছু করে লাভ হবে না। আপনাদের সঙ্গে জনগণ নেই। যাদের মদদে ক্ষমতায় ছিলেন তারাও আর আপনাদের দিকে তাকাবে না। এখন বিদায় নিতেই হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘তাদের নিষেধাজ্ঞার পর নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে পোশাক খাতে। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবহার হওয়া ঋণপত্রে (এলসি) বিশেষ একটি ধারা যুক্ত করে দিচ্ছেন। এই কারণে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদানে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এতদিন যারা ক্ষমতাসীন সরকারের নানা অপকর্ম নানাভাবে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন, তারাও পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। আমরা মনে করি, দেশের স্বার্থে এসব সংবাদকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে রং চড়িয়ে ব্লেইম-গেইমে লিপ্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়।’

শেয়ার করুন