বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বন্ধন আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বাংলাদেশ ও জাপান যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করেছে।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের মাইলফলক উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাস এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার পৃথক শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।
এ উপলক্ষে দুই প্রধানমন্ত্রীই দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপান ও এর জনগণের মূল্যবান সমর্থন ও অবদানের জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সফরের কথা তুলে ধরেন, যা দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় ও স্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ়তার ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন যা অদূর ভবিষ্যতে ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ হিসেবে বিকশিত হবে। তিনি জাপানের অব্যাহত অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সহায়তা লাভের কথা উল্লেখ করে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, গত ৫০ বছরে জাপানের দেওয়া ঈর্ষণীয় সহযোগিতা পারস্পরিক কল্যাণের লক্ষ্যে আগামী ৫০ বছরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও স্থায়ীভাবে প্রত্যাবাসন দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করার জন্য জাপানের সমর্থন চেয়েছেন। ঢাকা এবং টোকিও এই সংকট সমাধান করার লক্ষ্যে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে পাঠানো বার্তায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে জাপানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনিও ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরের উল্লেখ করেন যা দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এসময় প্রধান হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জাপান সরকার ও জনগণের দেওয়া নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন ও সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় বহুমুখী সহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রয়াসে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও বক্তব্য দেন।
এতে বিডা, বেপজা, বেজার চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ী মহলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।