‘শাবিপ্রবি উপাচার্যকে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাবিপ্রবি
ফাইল ছবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে তাঁর দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।

সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ভিসি এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

ইশফাকুল হোসেন বলেন, মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।

এ সময় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী বলেছেন- উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাথতভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এরআগে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আচার্য। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলমান সংকট নিরসনে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিমানযোগে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী। এই সফরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার স্থানে হাত দিয়ে প্রতীকী রক্তের ছাপ আঁকেন শিক্ষার্থীরা।

এরইমধ্যে প্রক্টর ড. মো. আলমগীর কবিরকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর নতুন প্রক্টর হিসেবে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ জানুয়ারি শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।

এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

টানা সাতদিন পর ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নাটক, খেলাধুলার মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের অব্যাহতি ছাড়া আর কোনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

শেয়ার করুন