তিন বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় অনুসন্ধান কমিটি

হাসান শান্তনু

উচ্চপদে চাকরি করে অবসর নেওয়া কাউকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে কী না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি)। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তির প্রস্তাবিত নাম থেকে দশজনের তালিকা সাজাচ্ছে কমিটি। দাবি থাকলেও এ তালিকা প্রকাশ করবে কী না, সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কী মানদণ্ড ও পদ্ধতিতে কমিটি দশজনের নাম প্রস্তাব করবে, তা জানানোর দাবি উঠেছে। এ বিষয়েও বিস্তারিত প্রকাশের বিষয়ে কমিটি এখনো সিদ্ধান্তহীনতায়।

আগে উচ্চ পদমর্যাদার চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবের বিষয়টি গতকাল ১৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আলোচিত হয়। তাদের কারো নাম দশজনের তালিকায় না রাখার মত দেন কেউ কেউ। বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে পদমর্যাদার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে মত-দ্বিমত, তর্ক-বিতর্কসহ চলমান আলোচনার কথাও বৈঠকে এসেছে। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কমিটি। সিদ্ধান্ত নিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি আবার বৈঠকে বসবে বলে জানায় কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র।

যোগাযোগ করলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী মত ও পথকে বলেন, ‘আগের পদমর্যাদার বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই না। ইসির প্রতি মানুষের আস্থার সংকট। সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের স্বার্থে পদমর্যাদা নিয়ে চিন্তা না করে রাজনৈতিক দলগুলো, সংগঠন বিশিষ্টজনদের নাম প্রস্তাব করেছেন।’ তবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘কারো নাম যারা প্রস্তাব করেছেন, প্রস্তাবিত ব্যক্তির পদমর্যাদার বিষয়টি তাদের মাথায় থাকা উচিত ছিল।’

জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নির্বাচন কমিশনার পদের চেয়ে উচ্চপদে চাকরি করে অবসরে থাকা ব্যক্তিদের নাম আছে তালিকায়। তারা সরকারি, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি থেকে অবসর নেন। আছে সাবেক দুই প্রধান বিচারপতিসহ ১৫ বিচারপতি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চার উপদেষ্টার নাম। ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা সিইসি ও কমিশনারদের চেয়ে উচ্চ পদমর্যাদার।

আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সিইসি পদমর্যাদার। উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদার। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের চার নম্বর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছয় নম্বর, আপিল বিভাগের বিচারপতি আট নম্বর আর উচ্চ আদালত বিভাগের বিচারপতিরা ৯ নম্বর ব্যক্তি। সিইসি হলেন রাষ্ট্রের আট নম্বর আর চার কমিশনার হলেন ৯ নম্বর পদমর্যাদার।

‘আগে উচ্চতর পদে চাকরি করা ব্যক্তিদের’ প্রসঙ্গে সার্চ কমিটির বুধবারের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার নতুন সচিব সামসুল আরেফিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘ইসি গঠনে কমিটির অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। এ লক্ষ্যে কমিটির আগামী বৈঠক শনিবার বেলা ১১টায়।’

রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নামের তালিকা পাঠাবে সার্চ কমিটি, সেটা প্রকাশ করার দাবি করেছে নাম প্রস্তাবকারী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলের জোটের শরিক দল আছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এ দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটা প্রকাশিত হলে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিটি।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, সেই তালিকা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠিয়ে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছি। এর ফলে কমিটির ওপর সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে বাছাই করার বিষয়ে চাপ তৈরি হবে। আরো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মত ও পথকে বলেন, ‘কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে, তা জনগণকে জানানো জরুরি।’ প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করা এবং তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া, তাদের সম্পর্কে শুনানি করা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে তাদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সুজন।

শেয়ার করুন