ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুর নাম মো. হাসান (১২)। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে আনার পর সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পৌনে সাতটার দিকে হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
অগ্নিকাণ্ডে জাহিদুল ইসলাম (১০) নামের আরেক শিশু দগ্ধ হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও সংকটাপন্ন।
নিহত হাসান বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড চরেরকান্দা গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। আর আহত জাহিদুল দুর্গারামপুর গ্রামের মিঠু মিয়ার ছেলে।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকার প্রতাপগঞ্জ বাজারে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হতাহত দুই শিশু ওই বাজারের হোসেন মিয়ার খাবারের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। আগুনে নয়টি দোকান পুড়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বেলা পৌনে দুইটার দিকে প্রতাপগঞ্জ বাজারের মুসা মার্কেটের হোসেন মিয়ার খাবারের দোকানে এক কর্মচারী এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের চুলায় তরকারি গরম করছিলেন। এ সময় চুলা ছিদ্র হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দোকানের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই নয়টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশের আরও ৮-১০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে বাঞ্ছারামপুর থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে কুমিল্লার হোমনা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুনে নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে। বিকেল সাড়ে চারটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকার প্রতাপগঞ্জ বাজারে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হতাহত দুই শিশু ওই বাজারের হোসেন মিয়ার খাবারের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত।
বিজ্ঞাপন
হোসেন মিয়ার খাবারের দোকানের কর্মচারী দুই শিশু হাসান ও জাহিদুল দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা পরে ঢাকায় পাঠান। উদ্ধার তৎপরতায় এবং আগুন নেভাতে গিয়ে আমির হোসেন (৪৫) ও দীন ইসলাম (৩৫) নামের দুজন আহত হন। তবে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রঞ্জন বর্মন বলেন, হাসান ও জাহিদুল ইসলাম নামের দুই শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। হাসানের শরীরের ৮০ শতাংশ ও জাহিদুলের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে না পেরে হাসান চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার অঞ্জন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দুই উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তাঁরা।
- আরও পড়ুন >> তিন বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় অনুসন্ধান কমিটি
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, আগুনে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান, দুটি রেস্টুরেন্ট, একটি বিরিয়ানি হাউস, একটি ওষুধের দোকান, একটি যন্ত্রপাতির দোকানসহ অন্তত নয়টি দোকান পুড়ে গেছে। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নগদ সাত হাজার টাকা ও দুই বান্ডিল করে টিন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংসদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে চার বান্ডিল টিন, নগদ ১০ হাজার করে টাকা ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।