ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা গড়ালো ১১তম দিনে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে প্রেসিডেন্ট পুতিন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের প্রতিহত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তা বাহিনীও। দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে গত ১০ দিন ধরে। এর মাঝে রোববার (৬ মার্চ) পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
শনিবার (৫ মার্চ) রাশিয়া ইউক্রেনের দুটি শহরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে মানবিক করিডোর চালু করা হয়। তা সত্ত্বেও ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রাখে রাশিয়া, এমন অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা চাইছেন বারবার। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমমনা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তা পাত্তাই দিচ্ছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মস্কো এবং কিয়েভের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ভেসতে যাওয়ার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। যেখানে মারিওপোল ও ভলনোভাখায় মানবিক করিডোর দিয়ে রাশিয়ার সেনাদের দ্বারা অবরুদ্ধ এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মত হয় দুদেশ। তবে জানা গেছে, সোমবার আরেক দফা আলোচনায় বসতে পারে দেশ দুটির প্রতিনিধিরা।
শনিবার (৫ মার্চ) রাতে টেলিভিশন ভাষণে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ান সেনাদের দখলে থাকা এলাকার জনগণকে আক্রমণে যেতে এবং লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের ঘর থেকে বের হতে হবে, শত্রুদের তাড়াতে হবে। তিনি ইউক্রেনীয় জাতিকে পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন।
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন যে তিনি একটি নিরপেক্ষ ইউক্রেন চান।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা, ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছেন, তিনি আগামী দিনে ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র সরবরাহের আশা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে রাশিয়ার ওপর। তা ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তার জন্য বাইডেন ১০ বিলিয়ন ডলার ফান্ডিং করার কথা বলেছেন। ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে ফাইটার জেট দিতে পোল্যান্ডের সঙ্গে কথাও বলেছে, এমন তথ্য দিয়েছেন হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র।
শনিবার (৫ মার্চ) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এয়ারক্র্যাফটও চেয়েছেন, ইউরোপীয় জোটের কাছে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক বৈঠকে ৩০ মিনিট ধরে কথা বলেছেন। পরে টুইট বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে দুপক্ষের মধ্যে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ৩ মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেনে ২৪৯ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫৫৩ জন। ১২ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু তাই নয় দেশের অভ্যন্তরেও স্থানান্তরিত এক লাখ ৬০ হাজারের মতো ইউক্রেনীয়।
সূত্র: রয়টার্স