বজ্রকণ্ঠে মুক্তির দিশা, মুক্তিকামী মানুষের চিরন্তন অনুপ্রেরণা

প্রতিটি জাতির জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে, সবকিছুকে ছাপিয়ে যা সেই জাতির আত্মার অবিভাজ্য অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সে রকমই একটি ঘটনা, যার তুলনা আমাদের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। আর এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, সেই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই, স্বাধীনতার পরও সেই ভাষণ আমাদের প্রাণিত ও উজ্জীবিত করে চলেছে। এ ভাষণ হলো সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বজ্রতুল্য ঘোষণা।

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জীবনে দিনটি চির অম্লান, অমলিন। বিশ্বের বুকে যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত থেকে যাবে ৭ মার্চের মহিমা ও দীপ্তি, যা চির ভাস্বর ও সমুজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায়। এ ভাষণ যখন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো বিশ্ব ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করে, তখন সেটি হয়ে ওঠে সমগ্র দেশ ও জাতির গৌরবের সমাচার।

সংস্থাটি বিশ্বের ৭৮টি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথি ও বক্তৃতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণও অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ইউনেসকোর স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য একই সঙ্গে গৌরব ও আনন্দের।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্বের সেরা বক্তৃতাগুলো নিয়ে উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার হিস্ট্রি নামে যে বই করেছেন, তাতেও সাতই মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কেবল ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়, গোটা জাতির প্রেরণা। যুগে যুগে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আন্দোলিত করার মতো ভাষণ অনেক নেতাই দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে সেই ভাষণের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নজির বিরল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে ওঠে, ২৫ মার্চের পর যা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।

মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে সেদিন বঙ্গবন্ধু যেমন আমাদের দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেছেন, তেমনি দেশবাসীর করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এক কথায় বলা যায়, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল। তাঁর এই ভাষণ কেবল মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তাই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও দিশা হয়ে থাকবে।

এই ভাষণ নিয়েই লিখিত হয়েছে অবিস্মরণীয় কবিতা, গল্প ও নিবন্ধ। ভবিষ্যতেও হবে। আর এভাবেই একটি ভাষণ হয়ে উঠেছে সমগ্র জাতির কণ্ঠস্বর। ভাষণটি বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানেরও অংশ। ইউনেসকোর স্বীকৃতি সমগ্র জাতির গৌরব। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর অমোঘ উচ্চারণ ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম আজও শেষ হয়নি।

জাতির এই আনন্দক্ষণে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই ভাষণের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে।

শেয়ার করুন