‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ।’ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ উল্লেখ করা স্বাধীনতা ঘোষণার প্রথম দুই লাইন। এটি ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ বার্তা। ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। স্বাধীনতা ঘোষণার পর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।
আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। গোটা জাতি আজ উদযাপন করবে স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্তি। বাঙালি জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ একটি দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাঙালি আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। তাঁর দেখানো সোনার বাংলার স্বপ্নের পথ ধরেই আজকের বাংলাদেশ। যার নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজকের দিনে জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের। স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। জাতি স্মরণ করে দেশের জন্য, বাংলা ভাষার জন্য, স্বাধিকারের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা প্রতিটি মানুষকে।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দিবসটি উদযাপন করবেন। বিশ্বব্যাপী চলা করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে এবং কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে হয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তাই স্বাধীনতা দিবস উউদযাপনে এবার স্বতঃস্ফূর্ততা বেশি থাকবে।
বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকরা শোষণ এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তাঁরা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
শনিবার প্রত্যুষে ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঢাকার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
সাধারণ ছুটির এই দিনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় হবে আলোকসজ্জা।
জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।
দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ শনিবার দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তারা আজ সকাল ছয়টায় সীমিত পরিসরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাতটায় ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং দোয়া, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
আজ বেলা তিনটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘স্বাধীনতা শোভাযাত্রা’ করবে বিএনপি। এ ছাড়া তারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।