সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের ভিত্তিতে সেরা রফতানিকারকের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য পণ্য ও সেবা রফতানিতে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ক্যাটাগরিতে ৬৬টি ট্রফি দেয়া হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে গতকাল জাতীয় রফতানি ট্রফি পুরস্কার দেয়া হয়। বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে সেরা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেডকে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রফতানি ট্রফি। প্রতিষ্ঠানটি হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল পণ্য রফতানির জন্য এ পদক পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এবারই প্রথম পুরস্কার চালু করা হলো। এখন থেকে প্রতি বছরই এ পুরস্কার দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেডসহ ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ২৩টিকে রৌপ্য এবং ১৫টিকে দেয়া হয় ব্রোঞ্জ পদক। রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেন। টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসানসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের (ব্যবসায়ী) অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে, যাতে কিছু অসাধু লোকের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে, সরবরাহ ও চাহিদার অবস্থা বিবেচনা করে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয়হীনতা নয়, বরং কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিশ্বের কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে রমজান ও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের আগমনে দেখা যায় কোনো কোনো পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই সাধারণত জাতীয়, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব উপলক্ষে পণ্যের দাম কমে যায়। এখানে কোনো উৎসব এলেই দেখা যায়, উৎসবকে পুঁজি করে কীভাবে জনগণের পকেট কাটা যায়, তা দেখার অপেক্ষায় থাকে ক্ষুদ্র ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ।
রাষ্ট্রপতি পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, মজুদ ও ঘাটতির সঠিক তথ্য-উপাত্ত সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে আগাম বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। যাতে কোনো দুষ্টচক্র কারসাজির মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ বাড়াতে না পারে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, রফতানিকারক, আমলা এবং সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠান থেকে তৈরি পোশাক খাতে (ওভেন) রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, তৈরি পোশাক খাত (নিটওয়্যার) স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেড, পণ্য খাত (সব ধরনের সুতা) বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড, টেক্সটাইল ফ্যাব্রিক্সে এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড, হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইলে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, টেরিটাওয়েলে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস লিমিটেড, হিমায়িত খাদ্যে বিভি সি ফুড লিমিটেড, কাঁচাপাটে ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্স, পাটজাত দ্রব্যে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড, চামড়ায় (ক্রাস্ট/ফিনিশড) এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড, চামড়াজাত পণ্যে পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড, ফুটওয়্যারে বে-ফুটওয়্যার লিমিটেড, কৃষিজ পণ্যে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং লিমিটেড, এগ্রো প্রসেসিং পণ্যে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, হস্তশিল্পজাত পণ্যে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, প্লাস্টিক পণ্যে বেঙ্গল প্লাস্টিকস লিমিটেড ইউনিট-৩, সিরামিক সামগ্রীতে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেসার্স ইউনিগ্লোরি সাইকেল কম্পোনেন্ট লিমিটেড, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্যে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, অন্যান্য শিল্পজাত পণ্যে বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড স্বর্ণপদক পায়।
এছাড়া ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশী মালিকানাধীন ‘সি’ ক্যাটাগরির তৈরি পোশাক শিল্পে (নিট ও ওভেন) স্বর্ণপদক পায় ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড। ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশী মালিকানাধীন ‘সি’ ক্যাটাগরির তৈরি পোশাক শিল্পে অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাতে ফারদিন অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ পণ্যে মনট্রিমস লিমিটেড, অন্যান্য প্রাথমিক পণ্যে অর্কিড ট্রেডিং করপোরেশন, অন্যান্য সেবা খাতে মীর টেলিকম লিমিটেড এবং নারী উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকদের সংরক্ষিত উৎপাদিত পণ্য ও সেবা খাতে স্কয়ার টেক্সটাইলস লিমিটেড স্বর্ণপদক পায়।