বিশ্বে নানা সংকটের মধ্যেও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে দেশের পণ্য রপ্তানি। গত কয়েক মাসের রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানির পর সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসেও ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
ফলে ১০ মাসেই পুরো অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্য প্রায় অর্জন করে ফেলেছে বাংলাদেশ। সোমবার (৯ মে) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চার হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকার বেশি।
এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার অঙ্ক ১০ মাসেই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার।
ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক ও বিশেষত নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াপণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ২৫ লাখ ৯ হাজার ডলারের দেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৬০০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এপ্রিল মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সকল পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় প্রসঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তা ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে শুধু পোশাক খাতে দুই বিলিয়ন থেকে তিনি বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে অবস্থানে রয়েছে, তাতে ইউরোপের দেশগুলোতে এখনো রপ্তানি নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে। তাই চলমান রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন দেশে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানির আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। ১০ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ১০১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে। এপ্রিল শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।
২০২০-২১ অর্থবছর পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ।