ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের গুজবে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের বাজারে আটার দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। মূলত অন্যান্য দেশে ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশে চালু রাখে। ফলে গুজবের কারণে যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, সম্প্রতি সেটির অবসান হয়। এরপর খোলা আটার দাম কমলেও কেজিপ্রতি সাত-আট টাকা বাড়তি দাম রয়ে গেছে প্যাকেটজাত আটায়।
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটে দেখা যায়, বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ আটার চালান রয়েছে। নেই কোনোরকম সংকট। কিছুদিন আগে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ফিরে গেছে আগের দামেই। খোলা আটা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। দুই কেজির প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।
পাইকাররা বলছেন ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, এমন গুজবে মিলমালিকরা আটার দাম বাড়িয়ে দেয়। কারওয়ান বাজারের সেকান্দার এন্টারপ্রাইজের মালিক সেকান্দার হোসেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি বন্ধ থাকায় যোগান কম, এই অজুহাতে গত মে মাসের শুরুর দিকে আটার দাম বাড়িয়েছে মিল মালিকরা। ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের গুজবে একই মাসের শেষের দিকে আরো এক ধাপ দাম বাড়ায় তারা। পাশাপাশি বেড়েছিল প্যাকেটজাত আটার দামও। তবে এখন যোগান স্বাভাবিক হওয়ায় দাম কিছুটা কমে ঠেকেছে মে মাসের প্রথম দফায় বাড়ানো দামে।
রাহা এন্টারপ্রাইজের মালিক গিয়াস আহমেদ বলেন, ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের খবরে মিল ব্যবসায়ীরা হুট করে আটার দাম বাড়িয়ে দেয়। পরে সেই খবর ভুল প্রমাণিত হলে আটার দাম আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
সংকট কাটলেও দাম কমেনি প্যাকেটজাত আটার। সর্বশেষ নির্ধারিত নতুন দামেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ডে প্যাকেটের আটা। ডিলাররা আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি এবং ভারতের রপ্তানি বন্ধকেই দাম না কমার কারণ হিসেবে বলছেন। তবে ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের খবর ভুলের পরেও কেন দাম কমছে না, এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ডিলাররা।
এসিআই কোম্পানির ডিলার ফজলুর রহমান বলেন, অফিসে যোগোযোগ করেন। কোম্পানি থেকে যা দাম দেয় আমরা সে দামেই পণ্য বিক্রি করি।
আটার বর্তমান দামে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। গত মে মাসে খোলা আটা বিক্রি হতো সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হতো ৯৬ থেকে ৯৮ টাকায়। তার আগে এপ্রিল মাসে আরও কম দাম ছিল।
কৃষি মার্কেটে আটা কিনতে এসেছেন সুফিয়া বেগম। তবে দামে যুত না হওয়ায় খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আটার দাম আগের মতোই আছে। খোলা আটা ৪৫ এর নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর প্যাকেট আটার দাম কমার বদলে উল্টো বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ক্রেতা ওসমান গনি বলেন, ঈদের আগেও আটা ৩৫ টাকা করে কেজিতে কিনেছি। ঈদের পর দাম বেড়ে দাঁড়ালো ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। যেটা আমাদের জন্য অনেক বেশি। ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের গুজবের পর দাম বেড়ে গিয়ে আবার আগের জায়গাতেই ফিরে এসেছে।