চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপির পর এবার চিত্রনায়ক ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। গেল শুক্রবার রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে খল অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বহু মানুষের সামনেই ঘটে এমন ঘটনা। সেই ঘটনার সাক্ষী চলচ্চিত্রের অনেক জৌষ্ঠ অভিনয়শিল্পীও। যদিও ওমর সানী নাকি আগে জায়েদ খানকে চড় মারেন। এর পরই তিনি গুলি করার হুমকি দেন।
কিন্তু জায়েদ খানকে কেন চড় মারতে গেলেন ওমর সানী? শিল্পী সমিতির নির্বাচনের অনেক আগে থেকে তো তাদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক। একসঙ্গে তারা সে সময় একটি সিনেমাও করেছেন। সেই ছবিতে মৌসুমীও রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিনিয়ার শিল্পী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মৌসুমীর সঙ্গে খারাপ আচরণের জেরেই নাকি জায়েদ খানকে ভরা মজলিসে চড় মারেন ওমর সানী। পরে জায়েদ খান কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করার হুমকি দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেতার ভাষ্য, কয়েকদিন আগে মৌসুমীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন জায়েদ খান। যদিও সেটা কোন ধরনের খারাপ আচরণ ছিল, সেটা জানানননি ওই শিল্পী। ওই ঘটনায় খুব রেগে গিয়েছিলেন মৌসুমীর স্বামী ওমর সানী। তিনি ডিপজলের কাছে এ নিয়ে বিচারও দিয়েছিলেন। পরে ডিপজল বলেছিলেন, ‘এসব বাদ দাও। জায়েদ খান আর মৌসুমীর কাছে যাবে না। ওকে ডিস্টার্বও করবে না। এসব নিয়ে ঝামেলা করার দরকার নেই।’
কিন্তু ডিপজলের এমন সমাধান মেনে নেননি ওমর সানী। তিনি নাকি খুঁজছিলেন জায়েদ খানকে। এরপর গেল শুক্রবার ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে যায় দুজনের। ওমর সানী জায়েদ খানকে দেখা মাত্রই কোনো কথা না বলে সবার সামনে চড় কষিয়ে দেন। সঙ্গে বলেন, ‘তোকে না বলছি আমার বউকে ডিস্টার্ব করবি না। কোনো ফাজলামি করবি না। অসম্মান করে কথা বলবি না।’ এরপর জায়েদ খান পিস্তল বের করে বলেন, ‘গুলি করে দেব।’
এ ঘটনায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে যান ডিপজল। তিনি বলেন, ‘এটা আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। এখানে এসব কী।’ যদিও হলভর্তি অনেক মানুষ থাকায় ঘটনাটি অনেকেই জানতে পারেনি। এই ঘটনার পর ওমর সানী রাগ করে না খেয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান। এর কয়েক মিনিট পর জায়েদ খানও চলে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে জানা গেছে।
যদিও ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি দেওয়ার বিষয়টা সংবাদমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তার দাবি, ‘এটা মিথ্যা খবর। এমন কোনো ঘটনাই বিয়েতে ঘটেনি।’ একই দাবি করেছেন অভিনেতা ডিপজলও। তিনি বলেন, ‘একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে দুজনের মধ্যে। তাছাড়া আমি তেমন কিছু জানি না। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার ইচ্ছা নাই।’
তবে ওমর সানী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ঘটনা সত্য। কিন্তু এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারব না।’
এর আগে চিত্রনায়িকা পপিকে গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন জায়েদ খান। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে ফেসবুক লাইভে এসে সে কথা পপি নিজেই প্রকাশ করেছিলেন। নায়িকা জানিয়েছিলেন, জায়েদ খান তার কাছ থেকে টাকা ধার করেই পিস্তল কিনেছিলেন। পরে সেই পিস্তলই তার বুকে ঠেকিয়েছিলেন। নায়িকার কথায়, ‘আমি শুটিং করছিলাম। জায়েদ খান সেখানে গিয়ে বলেন, জরুরি একটা কথা আছে। পরে আমি শুটিং শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসি। এরপর জায়েদ হঠাৎই আমার কানের পাশ দিয়ে ধম ধম করে গুলি ফোটালো। ভয় পেয়ে যাই খুব। আমি তো এসব দেখে অভ্যস্ত না।’
পপির দাবি, ‘একটু পর সেই পিস্তলের নল আমার বুকে ঠেকিয়ে জায়েদ খান বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। যতটুকু পারো কাজবাজ করে চলচ্চিত্র থেকে বেরিয়ে যাও। আমাকে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি দিতে থাকল। আমার ভাই-বোন নিয়ে মোটামুটি একটা থ্রেটই দিল। আমার ভাই ছোট ভাইয়ের নামে মামলা করার হুমকি দিল। বলেন, বোনরা তো বিয়ে শাদি করেনি, তাদেরও প্রবলেম হবে।’ ওই ঘটনার কয়েক মাস না যেতে এবার ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি দিলেন জায়েদ খান।
এদিকে, এ ঘটনায় এফডিসিপাড়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা জায়গায় উঠছে প্রশ্ন। বিস্ময় প্রকাশ করে অনেকে জানতে চেয়েছেন, জায়েদ খানের এত ক্ষমতার উৎস কোথায়? তিনি যখন তখন যাকে তাকে গুলি করার হুমকি দেন। প্রথমে পপিকে গুলি করার হুমকি দিলেন। এখন দিলেন ওমর সানীকে। জায়েদ খান যখন মন চায় এফডিসিতে পুলিশ এনে বিশৃঙ্খলা করেন।
এদিকে, যে অভিযোগে ওমর সানী চড় মেরেছেন জায়েদ খানকে, সেই ঘটনাও প্রথমবার নয়। এর আগে শিল্পী সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচনেও মৌসুমীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছিল জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। সে বার সভাপতি পদে নির্বাচন করেছিলেন মৌসুমী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। জায়েদ খান ছিলেন মিশার প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। অভিযোগ, মৌসুমী নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় দলীয় কর্মীদের নিয়ে মৌসুমীকে হেনস্তা করেন জায়েদ। গায়েও হাত তোলেন।
তবে এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে খুব দহরম-মহরম দেখা যায় ওমর সানী, মৌসুমী এবং জায়েদ খানের মধ্যে। তারা নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একটি সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেন। সেখানে ওমর সানী-মৌসুমী স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে এবং জায়েদ খান মৌসুমীর দেবরের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর শিল্পী সমিতির নির্বাচনে একই প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মৌসুমী-জায়েদ খান। দুজনেই শিল্পীদের ভোটে নির্বাচিতও হন। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই সেই দহরম-মহরম হাওয়া হয়ে গেল!