সৌদি আরবের সঙ্গে পুরনো সম্পর্কে ফিরে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: রয়টার্স

জ্বালানি তেলের জন্য সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ধরনা দেয়া নতুন কিছু নয়। তেলের বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে অতীতেও যুক্তরাষ্ট্র সৌদির কাছে বারবার নিবেদন জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, জর্জ বুশ সিনিয়র ও জুনিয়র, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সকলেই কোনো না কোনো সময় সৌদির তেল উৎপাদনে নানা দাবি-দাওয়া জানিয়েছিলেন। কিন্তু সবশেষ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দু’দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। আশা করা হয়েছিল, তিনি সৌদির কাছে দ্বারস্ত হবেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রলের দাম গ্যালন প্রতি ৫ ডলার বেড়ে যাওয়ায় বাইডেনকে সৌদির দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছে।

জুলাইয়ে সৌদি আরব সফর করবেন বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী জুলাইয়ে গালফ কো–অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সম্মেলনে অংশ নিতে সৌদি আরব সফর করবেন। হোয়াইট হাউস চলতি সপ্তাহে বাইডেনের এ সফরের পরিকল্পনার কথা জানায়। বাইডেনের সৌদি আরব সফরের উদ্দেশ্য হবে রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক জোরদার করা। সফরকালে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বাইডেনের একটি বৈঠক হতে পারে। দুই নেতার বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে হোয়াইট হাউস কাজ করছে বলে মে মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল সিএনএন। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে শুক্রবার (১৭ জুন) বাইডেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন না। বৈঠক করবেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল–সৌদের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে একসময় ‘রুটিন’ বৈঠক হতো। কিন্তু সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের দু’দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। তাই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বৈঠকটি গুরুত্ব পাচ্ছে।

সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন ইস্যু

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সত্তর বছরেরও বেশি। সম্পর্কের মূলে ছিল জ্বালানি তেল। সৌদি আরব বিশ্বে তেল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে। ওপেক দেশগুলোর মধ্যে শুধু সৌদি আরবই বিপুল পরিমাণ তেল ‍উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। সৌদির তেলের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদির নিরাপত্তার জন্য সর্বাধুনিক অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য দেয়। শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এক হয়েছিল। দু’দেশের এই স্বার্থের কারণে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকত।

কিন্তু দেড় বছর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে এই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সৌদি বংশদ্ভূত ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজকে দায়ী করেছিলেন বাইডেন। যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের অংশগ্রহণ, মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও চীনের প্রতি সৌদি দৃষ্টিভঙ্গি সহ্য হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য সৌদি আরব

যুক্তরাষ্ট্র যখন সৌদি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তখন বিশ্ববাজারে তেল পর্যাপ্ত ছিল। জ্বালানি তেলের এত দামও ছিল না, বরং নিম্নমুখী ছিল। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ও এর জেরে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব বাজারে তেলের সংকট বাড়িয়েছে। এ ছাড়া ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ পরিস্থিতিতে এশিয়ায় মনোযোগী বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বদল করতে চলেছে। তেলের বাজার মসৃণ করতে ও করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাইডেনের সৌদি সফর অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এ সফরে সৌদি আরবকে তেলের উত্তোলন বাড়াতে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন তিনি। সৌদি আরবের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কারণ হলো ইরান। ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে দু’দেশের উদ্বেগ রয়েছে।

শেয়ার করুন