মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুলনার বটিয়াঘাটার ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- আমজাদ হোসেন হাওলাদার সহর আলী সরদার, আতিয়ার রহমান, মোতাছিম বিল্লাহ, কামাল উদ্দিন গোলদার ও নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় ৫ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী, মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সীমন, রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও গাজী এম এইচ তামিম।
রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে ৬ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ২০৩ পৃষ্ঠার এ রায় পড়া শুরু হয়। রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। তিনি রায় পড়ার আগে বলেন, কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধীর বর্তমান বয়স বিবেচনায় বিচার হচ্ছে না; বিচার হচ্ছে ৭১ সালে তারা যেসব অপরাধ করেছেন সে অপরাধের বিবেচনায়। আজকে যাদের দেখছেন বয়স ৮০ বছরের উপরে, তখন তাদের বয়স ছিল ৩০ বছর।
আদালতে রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
গত ২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ছয় জনের রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ চার-পাঁচজন রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিনোদ মণ্ডলকে অবৈধভাবে আটক-নির্যাতন, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা।
তৃতীয় অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের চারজনকে হত্যা, চার-ছয়টি বাড়ির মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে।
চতুর্থ অভিযোগে: ’৭১ এর ২৯ নভেম্বরে এই আসামিরা বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করে।